ভাইরাস
শিশির
বিশ্বাস
অফিসে
আজ এমন ভয়ানক অবস্থায় পড়তে হবে, ভাবতেই পারেনি প্রশান্ত। গত রাতে এক ফোঁটা ঘুম হয়নি।
সেটা অবশ্য অনিদ্রা রোগের জন্য নয়। শরীর-স্বাস্থ্য বরাবরই যথেষ্ট ভাল। বিয়ে-থা করেনি।
মা মারা যাওয়ার পর প্রায় ঝাড়া হাত-পা। অফিস ছাড়া সময় কাটে হ্যাম, অর্থাৎ অ্যামেচার
রেডিয়ো নিয়ে। কাল রাতে ট্রান্সমিটার খুলে হঠাৎই পাওয়া গিয়েছিল কাছের এক বন্ধুকে।
বেশ কয়েক মাস পরে। কথায় কথায় কোথা দিয়ে সময় পার হয়ে গেছে, টেরই পায়নি। শখের
হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরদের এমন মাঝে-মধ্যেই হয়। অথচ ওর চাকরি টেলিফোন অফিসে। তাও ইন্টারনাল
সুইচ রুমে। প্রশান্তর মতো টেলিকম অফিসারদেরও শিফট ডিউটি করতে হয়। মর্নিং থাকলে বেরিয়ে
পড়তে হয় ভোর ছ’টার মধ্যেই। তবে পরোয়া করে না।
আজও
সেই মর্নিং ডিউটি ছিল। দিনের শুরুতে কিছু রুটিন মেনটেনেন্সের কাজ থাকে। ডিউটি বুঝে
নিয়ে পেরিফেরাল রুমে ঢুকে যথারীতি চোখ ফেলেছিল ডিসপ্লে ইউনিটের উপর। অভিজ্ঞ চোখ দুটো
মুহূর্তে কুঁচকে উঠল। তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেল লাগোয়া ও.এম.সি রুমের দিকে। টেলিফোন এক্সচেঞ্জের
প্রাণকেন্দ্র এই সুইচ রুমটি সাধারণত লক করা থাকে‚ দরকারে খোলা হয়। মেনটেনেন্সের বেশিরভাগ কাজ সারা
হয় পেরিফেরাল রুম থেকে। হাই-টেক টেলিকম সিস্টেমের এটাই দস্তুর। একটুও সময় নষ্ট না
করে প্রশান্ত কীবোর্ড থেকে চাবি নিয়ে দরজা খুলতেই এক ঝলক হিমেল বাতাসে শিরশির করে
উঠল শরীর। লো টেম্পারেচারে রাখা ও.এম.সি রুমে ঢোকার জন্য আলাদা অ্যাপ্রন ব্যবহার হয়।
তবু মুহূর্তমাত্র দেরি না করে ঢুকে পড়ল। বড় আকারের ঘরটিতে সারি সারি ফ্রেমে মাউন্ট
করা হার্ডওয়্যার শেলফ। ভিতরে ইলেকট্রনিক কার্ড। অধিকাংশ শেলফ-এ বিভিন্ন রঙের সিগনাল
এল.ই.ডি গুলো ডেঞ্জার লেভেলে স্থির হয়ে রয়েছে।
হাই-টেক
এই ইলেকট্রনিক টেলিফোন এক্সচেঞ্জকে বড় মাপের একটা কম্পিউটার বলা যায়। দপ্তরে তাই
কাজের মানুষের কদর আছে। হায়েস্ট লেভেলের উপরওয়ালা পর্যন্ত তাদের সমীহ করেন। এই অফিসে
প্রশান্ত রায় তেমনই একজন। নানা জটিল সমস্যার মুশকিল আসান। তবু এল.ই.ডি বাতিগুলোর দিকে
তাকিয়ে সেই মানুষটির মাথাও আজ হঠাৎ কেমন ঝিমঝিম করে উঠল। কী ভয়ানক ব্যাপার! কলকাতা
শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র এই ও.এম.সি এই মুহূর্তে প্রায় খাদের কিনারায়
পৌঁছে গেছে। ধসে পড়াবে কিছুক্ষণের মধ্যেই।
সন্দেহ
নেই, সমস্যার শুরু অনেক আগেই। নাইট ডিউটি ছিল অনিন্দ্য বোসের। একেবারেই ছেলেমানুষ।
সবে জয়েন করেছে। বেচারা ডিসপ্লে ইউনিটের খুঁটিনাটি অ্যালার্ট বুঝে উঠতে পারেনি। ও.এম.সি
চেক করার প্রয়োজনও বোধ করেনি। তারপর জানে, মর্নিং ডিউটি প্রশান্তর। সাতটার আগেই চার্জ
বুঝে নিয়ে বসে পড়বে টি.টিওয়াই, অর্থাৎ, টেলি টাইপ রাইটারের সামনে। ও.এম.সি-তে একের
পর এক কম্যান্ড পাঠিয়ে দরকারি কাজগুলো সেরে ফেলবে। কিন্তু সে তো রুটিন মেনটেনেন্স।
এই মুহূর্তে ও.এম.সি-এর যা অবস্থা, কী করে সামাল দেবে, বুঝে উঠতে পারল না। চাকরি জীবনে
এমন সমস্যা আগে হয়নি।
রোটেশন
ডিউটি হলেও গত প্রায় মাস খানেক ধরে প্রশান্ত টানা মর্নিং করে চলেছে। আসলে এই ডিউটিকে
ভয় পায় সবাই। একে তো ঘর-সংসার সামলে এই ভোরে যথা সময়ে হাজির হওয়ার সমস্যা। তার
উপর কাজের চাপ থাকে। এক হাতে সামলাতে হয়। তবু সহকর্মীদের কেউ অনুরোধ করলে হামেশাই
তাদের মর্নিং ডিউটি নিয়ে নিয়েছে ও। ব্যাপারটা লক্ষ্য করে গত সপ্তায় ঊর্ধ্বতন অফিসার
এস.ডি.ই বোস সাহেব নিজেই বলেছিলেন, যা শুনছি, আগামী সপ্তাতেও আপনাকে মর্নিং ডিউটি দেওয়া
হতে পারে। কিন্তু টানা অনেক দিন তো মর্নিং করলেন। আপনাকে বরং অন্য ডিউটি দিতে বলে দিই।
উত্তরে
প্রশান্ত মৃদু হেসে বলেছিল, ‘আমার কিন্তু অসুবিধে নেই স্যর।’
অসুবিধে
যে নেই, বোস সাহেব নিজেও জানেন। প্রশান্ত রায় একা মানুষ। অফিসেই পড়ে থাকে দিনের বেশির
ভাগ সময়। তবু তিনি ঊর্ধ্বতন অফিসার। অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, এসব দিকে সামান্য নজর রাখতে
পারলে সহজে অধস্তন কর্মীদের আনুগত্য পাওয়া যায়।
খেয়ালি
মানুষ প্রশান্তকে বিলক্ষণ চেনেন বোস সাহেব। সে বছর পাঁচেক আগের কথা। বোস সাহেব সবে
এই অফিসে এসেছেন। সেদিন চেম্বারে ফাইল দেখছেন, হঠাৎ প্রশান্ত রায় ঘরে ঢুকে একটা ই.এল
আর স্টেশন লিভ অ্যাপ্লিকেশন সামনে রেখে বলল, 'স্যর, পরশু থেকে পনেরো দিনের ছুটি নিচ্ছি।’
বোস
সাহেব ততদিনে প্রশান্ত রায়কে বেশ চিনে ফেলেছেন। এমন কাজের মানুষকে এভাবে হঠাৎ ছুটি
দিতে টেলিফোন অফিসে সব অফিসারই গড়িমসি করেন। মোলায়েম করে বললেন, ‘বাড়িতে খুব কাজ
আছে নাকি, মিস্টার রায়?’
‘না
স্যর, বাড়িতে তেমন কাজ থাকে না আমার। ঠিক করেছি ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স’ বেড়াতে যাব।
টেন্ট করে কয়েকটা দিন থাকার ইচ্ছে আছে। অ্যাপ্লিকেশনেও তাই লিখেছি।’ চটপট উত্তর দিয়েছিল
প্রশান্ত।
‘বাহ,
খুব ভাল!' বোস সাহেব বললেন, ‘তা কজন যাচ্ছেন?'
‘কজন
মানে!’ প্রায় আকাশ থেকে পড়ল অন্য পক্ষ, ‘আমি একাই যাই। কাউকে তো সঙ্গে নিই না! ওতে
নিজের মতো করে দেখা হয় না।’
কথাটা
মিথ্যে নয়। কিন্তু হিমালয়ের প্রায় বারো হাজার ফুট উঁচুতে ওই নির্জন হিমশীতল উপত্যকায়
একটা মানুষ টেন্ট করে একা কয়েক রাত কাটাবে, ভাবতে গিয়ে মাথা ঘুরে গিয়েছিল বোস সাহেবের।
তবে কথা বাড়াননি। অ্যাপ্লিকেশন রেকমেন্ড করে দিয়েছিলেন।
পরের
দিন সহকর্মী ঘোষ সাহেবের কাছে প্রসঙ্গটা তুলতেই তিনি প্রায় আঁতকে উঠে বলেছিলেন, ‘ছুটি
নিয়ে ভদ্রলোকের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়নি তো?’
‘না।
কেন বলুন তো?'
‘আর
বলবেন না। মানুষটার সব ভাল, শুধু ওই একটা ব্যাপার ছাড়া। খুব ভাল করেছেন। সেবার যা
কাণ্ড হয়েছিল!’
‘কী
কাণ্ড?’ কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করেছিলেন বোস সাহেব।
‘বছর
কয়েক আগে আপনার জায়গায় শ্রীনিবাসন সাহেব ছিলেন। বাইরের মানুষ। তার ওপর সবে এসেছেন।
প্রশান্ত রায়কে চিনে উঠতে পারেননি। এমনই এক ছুটির আর্জি নিয়ে আসতে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন,
এভাবে ছুটি দেওয়া যায় না। নিয়ম নেই। প্রশান্ত রায় তখন আর কিছু বলেননি। চলে গিয়েছিলেন।
পরের দিন রীতিমতো স্ট্যাম্প পেপারে রেজিগনেশন লিখে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীনিবাসন সাহেবের
টেবিলে। বেচারা শ্রীনিবাসন সাহেবের তখন ছেড়ে ‘দে মা‚ কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। খবরটা কানে যেতে খোদ জি.এম
সাহেব তলব করেছিলেন তাঁকে।’
আজ
ও.এম.সি রুমে দাঁড়িয়ে প্রশান্তর হঠাৎ মনে হল, সেদিন বোস সাহেবের কথা শুনে অন্য ডিউটি
নিলে এই অবস্থায় পড়তে হত না। কিন্তু সে মুহূর্তের জন্য। দ্রুত ও.এম.সি থেকে বের হয়ে
টি-টিওয়াই থেকে পর পর গোটা কয়েক কম্যান্ড দিল প্রশান্ত। তারপর ডিসপ্লে ইউনিটের দিকে
তাকিয়ে নভেম্বরের এই সকালে চড়া এ.সি রুমে বসেও টের পেল, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম
জমতে শুরু করেছে। দীর্ঘ চাকরিজীবনে এমন অবস্থা কখনও হয়েছে, মনে করতে পারল না।
হাতে
সময় খুবই কম। ইউনিট বাঁচাতে হলে যা করবার এর মধ্যেই করতে হবে। চট করে সামনে টেবিল
থেকে টেলিফোনটা তুলে নিল। সন্দেহ ছিল, তবু কিছুক্ষণ ধরে থাকার পরে ডায়াল টোন পাওয়া
গেল। কিন্তু এই সকালে কাকে ফোন করবে, চট করে ভেবে উঠতে পারল না। তারপর বোস সাহেবের
কথাই মনে পড়ল আগে। ওপরওয়ালা হিসেবে ব্যাপারটা অবশ্যই তাঁকে জানিয়ে রাখা দরকার। কিন্তু
ডায়াল করতে গিয়েও থেমে গেল হাত। বেশ জানে, এই সকালে বোস সাহেব ঘুম থেকে উঠে সবে হয়তো
চায়ের কাপ নিয়ে বসেছেন। এখন এই খবর দিলে সব মাথায় উঠবে। তারপরেই হঠাৎ তাকায়ুর রোগারের
কথা মনে পড়ল।
তাকায়ুর
রোগার জাপানি। ওদের এই ইলেকট্রনিক এক্সচেঞ্জের ইকুইপমেন্ট যে বিদেশি কোম্পানির, তাকায়ুর
এদেশে তাদের অফিসের এক ইঞ্জিনিয়ার। দিল্লিতেই থাকে বেশি সময়। তবে মাঝে-মধ্যে কলকাতায়
আসে। বয়স বেশি নয়। বছর তিরিশের মধ্যে। কলকাতায় এলে বিভিন্ন টেলিফোন অফিসে খোঁজ নিয়ে
যায়। আর পাঁচটা জাপানির মতো বেশ আমুদে আর আলাপী। ভালই পরিচয় প্রশান্তর সঙ্গে। আর
তাতেই বুঝেছে, সিস্টেমের উপর যথেষ্টই দখল আছে মানুষটার। এখন কলকাতাতেই রয়েছে। তবে
সন্দেহ নেই, অনেক রাত পর্যন্ত নাইট ক্লাবে কাটিয়ে হোটেলের ঘরে এখন গভীর ঘুমে। কিন্তু
তা সত্ত্বেও মনস্থির করে দ্রুত হোটেলের নম্বর বের করে প্রশান্ত ডায়াল করল।
একটু
পরেই ওদিক থেকে ঘুম জড়ানো আওয়াজ, ‘গুড মর্নিং স্যর। তাকায়ুর রোগার।’
‘গুড
মর্নিং মি, রোগার।’ উত্তর দিল প্রশান্ত, ‘আমি টেলিফোন অফিস থেকে প্রশান্ত রায়।’
‘ও
হ্যাঁ, কী ব্যাপার স্যর? ও প্রান্তের ঘুম জড়ানো কণ্ঠস্বর মুহূর্তে প্রায় স্বাভাবিক।
‘ও.এম.সি
হঠাৎ প্রায় বসে যাওয়ার মুখে।’ ভনিতা না করে প্রশান্ত বলল, ‘কিছু হেল্প করতে পারো?’
ও.এম.সি-তে
দুটো ইউনিট থাকে। একটা অ্যাকটিভ, যেটি চালু অবস্থায় থাকে। অন্যটা স্ট্যান্ডবাই। কোনও
কারণে অ্যাকটিভ ইউনিটে সমস্যা দেখা দিলে স্ট্যান্ডবাই আপনা থেকে চালু হয়ে যায়। তাকায়ুর
সেটাই জানতে চাইছে। প্রশান্ত বলল, ‘অ্যাকটিভ ইউনিট আগেই বসে গেছে। এখন স্ট্যান্ডবাই
ইউনিটেরও প্রায় একই অবস্থা।
‘অ্যাঁ!’
রীতিমতো উদ্বিগ্ন ওদিকের কণ্ঠস্বর। ‘সে কী! ভাইরাস নয় তো?’
‘আমারও
তাই ধারণা।’ প্রশান্ত বলল, ‘ভয়ানক কোনও ভাইরাস। যেটুকু ইনফরমেশন পেয়েছি, তাতে সেটাই
সম্ভব। সফটওয়্যারগুলো ঘেঁটে যেতে শুরু করেছে। ব্যাকআপ থেকে রিপেয়ারের চেষ্টা করে
লাভ হয়নি। এই অবস্থায় তোমার কথাই মনে পড়ল আগে।
‘এ-হে!’
একরাশ হতাশা ঝরে পড়ল তাকায়ুর রোগারের গলায়, ‘তোমাদের এই সিস্টেমটা এখন একেবারেই
ব্যাক ডেটেড। ভাইরাস প্রটেকশনের ব্যবস্থা তেমন ভাল নেই। নতুন সিস্টেম, যা এখন চলছে,
এখানে আসতে আরও হয়তো বছর তিনেক, মানে প্রেজেন্ট সেঞ্চুরি পার হয়ে যাবে। মেনটেনেন্সের
ব্যাপারে আরও অ্যালার্ট থাকা উচিত ছিল। যা অবস্থা বলছ, ভাইরাস অ্যাটাক হয়েছে অন্তত
তিন ঘণ্টা আগে।’
‘তাহলে?'
তাকায়ুরের ওই কথায় আরও ঘাবড়ে গিয়ে প্রশান্ত বলল, ‘বস‚ আতে পারবে একবার? দেখি ততক্ষণ
সামাল…’
প্রশান্তর
কথা শেষ হল না। ঘড়ঘড় শব্দে লাইনটা কেটে গেল। পাগলের মতো বারকয়েক টেলিফোনের ক্রাডল
ট্যাপ করেও ডায়াল টোন পাওয়া গেল না। একটা হিমেল স্রোত হঠাৎ ওর শিরদাঁড়া বেয়ে নামতে
শুরু করল। কাউকে ফোন করে খবর দেবে, সেই উপায়ও আর নেই। ঘড়ির দিকে তাকাল, সবে সাতটা।
অফিসে স্টাফ এই মুহূর্তে হাতে গোনা। খোঁজ করলে কাউকে পাওয়া যাবে হয়তো। কিন্তু এই
অবস্থায় তা করতে গেলে অযথা সময় নষ্টই হবে। অগত্যা সেই মতলব মুলতুবি রেখে ফের টি.টিওয়াই-এর
দিকে মনোযোগ দিল।
প্রশান্তর
দু’হাতের আঙুল তখন দ্রুত কী–বোর্ডের উপর চলতে শুরু করেছে। চোখ সামনে ডিসপ্লে ইউনিটের
দিকে। পাশে টেলিফোনটা বেজে উঠল। প্রায় ছোঁ মেরে তুলে নিতেই ওদিক থেকে কথা ভেসে এল,
‘গুড মর্নি।’
‘গুড
মর্নিং। আমি প্রশান্ত রায়। কে বলছেন?’
‘আরে
বস আমি‚
আমি তাকায়ুর রোগার। বুঝতে পারছি, মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার!’
টেলিফোনের
ওদিকে তাকায়ুর রোগার একেবারেই বুঝতে পারেনি প্রশান্ত। থমথম খেয়ে বলল‚ ‘একদম বস।’
‘সে
তো বুঝতেই পারছি।’ মৃদু হাসির আওয়াজ ও প্রান্তে, রাতে না ঘুমোলে এমন হবে না তো কি!’
‘কী
বলব, গত রাতে হ্যাম রেডিয়োতে অনেক দিন পরে এক পুরনো বন্ধুকে পেয়েছিলাম। কথায় কথায়
কখন রাত পার…’
বলতে
বলতে হঠাৎ থেমে গেল প্রশান্ত। কুঁচকে উঠল ভুরু, ‘ক-কিন্তু তুমি কী করে জানলে?’
উত্তরে
ও প্রান্তে মৃদু হাসি। তারপর ছোট্ট উত্তর, ‘ছাড়ো ওসব। ডোন্ট নার্ভাস। আমি আসছি। যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব।’
প্রশান্তকে
কোনও কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তাকায়ুর কেটে দিল লাইন। কিন্তু প্রশান্ত ততক্ষণে সাত
হাত জলের তলায়। কতদিন আগে সেই কিশোর বয়সের কথা। স্কুলে ভাল রেজাল্ট করায় বাবা চমৎকার
একটা ট্রানজিস্টার সেট কিনে দিয়েছিলেন। শর্ট ওয়েভে দেশ বিদেশের বাংলা অনুষ্ঠান শুনতে
শুনতেই শুরু করেছিল ডিএক্সিং, অর্থাৎ বহু দূরবর্তী বিভিন্ন রেডিয়ো স্টেশন নিজের রিসিভারে
ধরার প্রচেষ্টা। তারপর বছর কয়েকের মধ্যেই একজন পাকা ডিএক্সার। সারা পৃথিবীর ছোট-বড়
বেতার কেন্দ্রের লোভনীয় কিউ.এস.এল কার্ডে অ্যালবাম ভরতি। সেই সব কার্ড, দেশ বিদেশের
বেতার কেন্দ্র থেকে লেখা চিঠি, রকমারি স্টিকার প্রশান্ত আজও আগলে রেখেছে প্রায় যক্ষের
ধনের মতো।
এই
ডিএক্সিং করতে করতেই ঝোঁক অ্যামেচার রেডিয়োর দিকে। খরচের কথা ভেবে গোড়ায় চাপা ছিল
ইচ্ছেটা। কিন্তু চাকরিটা পাবার পর আর দেরি করেনি। বিড়লা মিউজিয়াম থেকে অ্যামেচার
রেডিয়ো কোর্স-এ প্রাথমিক গ্রেড-১ ট্রেনিং শেষ করে লাইসেন্স জোগাড়ের পর লেগে পড়েছিল
উঁচু মানের একটা হ্যাম রেডিয়োসেটের খোঁজে। বেতার তরঙ্গ প্রেরণ এবং গ্রহণ করার জন্য
প্রয়োজনীয় ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার, দুটোই রয়েছে এতে। সেই সময় জিনিসটা খুব সহজলভ্য
ছিল না। তারপর আর্থিক ব্যাপারটাও ছিল। তবে হাল ছাড়েনি। মর্নিং ডিউটি থাকলে ছুটির পর
মাঝে-মধ্যে চলে আসত ক্যামাক স্ট্রিটে অকশনের দোকানগুলোয়। খোঁজ-খবর নিত।
ওই
সময়ই পরিচয় এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ভদ্রলোকের সঙ্গে। কলকাতার পাট উঠিয়ে তিনি অস্ট্রেলিয়া
চলে যাবেন। ঘরের জিনিসপত্র বেচে দিয়ে যাচ্ছেন। হ্যাম অপারেটর হওয়ার কারণে একটা গ্রুন্ডিগ
হ্যাম রেডিয়ো তাঁর কাছে আছে। বিক্রি করে দেবার ইচ্ছে। শুনে প্রায় হামলে পড়েছিল প্রশান্ত।
অকশনে দেবার দরকার নেই, ও কিনতে চায় যন্ত্রটা। ওর আগ্ৰহ দেখে ভদ্রলোক রাজি হয়ে গিয়েছিলেন।
সেই থেকে ওটা আজও প্রশান্তর নিত্যসঙ্গী। বর্তমানে বাজারে হ্যাম অপারেটরদের জন্য রেডিও
সেটের অভাব নেই। কিন্তু অভিজ্ঞতার নিরিখে প্রশান্তর বুঝতে বাকি নেই, জার্মান মেড পুরনো
মডেলের এই যন্ত্র কোনও অংশে কম নয়। তা ছাড়া ধকল সইতে পারে অনেক বেশি।
একটু
বেশি রাতের দিকে অ্যান্টেনা তুলে রেডিয়ো অন করে কলসাইন দিতে শুরু করলেই কিছুক্ষণের
মধ্যে ও প্রান্ত থেকে উত্তর ভেসে আসে, ‘থ্যাঙ্ক ইউ, ফ্রেন্ড, গুড লিসনিং।’
শুভেচ্ছা
বিনিময়ের সঙ্গেই চলে আসে উত্তরদাতার কলসাইন। সেই কলসাইন থেকেই বোঝা যায়, তিনি কোন
দেশ, কোন অঞ্চলের মানুষ। ভাষা কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। মর্স কোড বা টেলিফোনিক ল্যাঙ্গুয়েজে
দিব্যি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাক্যালাপ করা যায়। সত্যি কথা বলতে কী, এ এক অন্য জগত। অন্য
অনুভূতি। তাই হ্যাম রেডিওয় যে একবার মজে গেছে, তার কাছে বাকি সব তুচ্ছ।
কিন্তু
ব্যাপারটা শুধু তাকায়ুর কেন, অফিসেও কারো জানার কথা নয়। কোনও দিনই কাউকে বলেনি। সেই
প্রথম দিন বোস সাহেবের কাছে ছুটির আবেদন নিয়ে যেতে একা ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স’ যাচ্ছে
শুনে। উনি স্বভাবতই অবাক হয়েছিলেন। ব্যাপারটা তখন বলাই যেত তাঁকে। কিন্তু বলেনি। আসলে
প্রশান্তর কাছে এই হ্যাম রেডিয়ো একান্তই নিজস্ব। ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্সে সেবার কয়েকটা
দিন প্রায় ঘোরের মধ্যে কেটে গিয়েছিল। দিনভর ঘুরে বেড়িয়েছে ফুলের উপত্যকায়। আর
সময় পেলেই বসে পড়েছে হ্যাম রেডিয়ো নিয়ে। তেমন কাউকে পেলে, জেনে নিয়েছে ভ্যালি অফ
ফ্লাওয়ার্সের নানা খুঁটিনাটি। কখনই একা মনে হয়নি।
প্রথম
দিনই এক বন্ধু জানিয়েছিল, জোয়ান মার্গারেট লেগির কথা। বিদেশিনী এই মহিলা ইংল্যান্ড
থেকে ফুল, লতাপাতা নিয়ে গবেষণার জন্য ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্সে এসেছিলেন। ছিলেন অনেক
দিন। দুর্ভাগ্য, স্পেসিমেন সংগ্রহের সময় পাহাড় থেকে পড়ে ১৯৩৯ সালে এখানেই তাঁর মৃত্যু।
প্রকৃতি প্রেমী এই বিদেশিনীকে এখানেই সমাধিস্থ করা হয়। খবরটা জানার পরে সেই দিনই রংবেরঙের
ফুলে প্রায় ঢাকা পড়ে যাওয়া তাঁর সমাধি খুঁজে বের করেছিল ও। টেন্ট করেছিল পাশেই।
হ্যাম রেডিওয় বুঁদ হয়ে তিনটে দিন তারপর কোথা দিয়ে পার হয়ে গিয়েছে, টের পায়নি।
হয়তো আরও দু'এক দিন থেকে যেত। কিন্তু ট্রান্সমিটারের ব্যাটারি কমে যাওয়ায় হয়নি।
গত
প্রায় দেড় দশকে এই হ্যাম রেডিয়োর মাধ্যমে নানা দেশের কত মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে।
দিনের পর দিন কত কথা হয়েছে। তাদের অনেককেই পরে আর পাওয়া যায়নি। কিন্তু ব্যতিক্রমও
আছে। তাদের একজন ‘ডাবল এক্স’। হ্যাঁ, এক রাতে হঠাৎই মানুষটির সঙ্গে যোগাযোগ হতে ওই
নামেই নিজের পরিচয় দিয়েছিল। সেই প্রথম দিন প্রায় ঘণ্টা তিনেক কথা হয়েছিল। মানুষটির
জ্ঞানের পরিধি, চমৎকার বাচনভঙ্গি প্রায় মোহিত করে দিয়েছিল ওকে। এতদিন হ্যাম রেডিয়ো
নিয়ে আছে, এমন বন্ধুর সন্ধান আগে পায়নি। এরপর থেকে রেডিয়ো অন করলেই খুঁজে বেড়াত
মানুষটিকে।
দ্বিতীয়বার
তাঁকে পাওয়া গিয়েছিল প্রায় মাস খানেক পরে। অদ্ভুত ব্যাপার, তখন তাঁর ফ্রিকোয়েন্সি
পালটে গেছে। কলসাইনও আলাদা। অন্য দেশ। তবে গলার স্বরে চিনতে অসুবিধে হয়নি। কৌতূহলে
ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করতে ও প্রান্তের মানুষটি মৃদু হেসে বলেছিল, ‘তাতে কী? নাম কিন্তু
সেই ‘ডবল এক্স’। যাই হোক, অনেক দিন পরে আবার যোগাযোগ করা গেল। কেমন আছ, বন্ধু?
এরপর
ওই ব্যাপারে প্রশান্ত আর কোনও প্রশ্ন করতে পারেনি। নানা কথায় পার হয়ে গিয়েছিল সময়।
প্রশান্তর সবচেয়ে কাছের এই রেডিয়ো-বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক এরপর আর বিচ্ছিন্ন হয়নি।
অবশ্য ঘন-ঘন যোগাযোগ হত, এমন নয়। কখনও মাসে দু'তিন বার, কখনও কয়েক মাস অন্তর। সেই
মানুষটিই গত রাতে হঠাৎই চলে এসেছিল রেডিয়োতে। তারপর স্বভাবতই প্রশান্তর আর সময়জ্ঞান
থাকেনি। কথায় কথায় রাত পার হয়ে প্রায় ভোর। কিন্তু তাকায়ুর সেটা কীভাবে জানল, কিছুতেই
ভেবে পেল না। তবে তা নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে ফের টি.টিওয়াই-এর দিকে মন দিল।
দ্রুত
আঙুল চলতে লাগল কী–বোর্ডের উপর। এই অবস্থায় ব্যাকআপ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সফটওয়্যার
রিপেয়ার করতে পারলে সিস্টেম বাঁচানো যেতে পারে।
কতক্ষণ
এইভাবে কাজ করেছে, হিসেব নেই প্রশান্তর। হঠাৎ তাকিয়ে দেখল, ইতিমধ্যে তাকায়ুর কখন
যে পেরিফেরাল রুমে ওর পাশের টি.টিওয়াই-এর সামনে বসে পড়েছে, টেরই পারেনি। বড় একটা
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে প্রশান্ত প্রায় লাফিয়ে উঠল, ‘আরে, কখন এলে বস!’
কী–বোর্ডের
উপর ঝুঁকে কাজ করছিল তাকায়ুর। প্রায় ঝড়ের বেগে ওর আঙুল চলছিল। উত্তরে সামান্য মাথা
নাড়ল শুধু। প্রশান্ত বলল, ‘অনেক চেষ্টায় গোটা কয়েক প্রোগ্রাম রিপেয়ার করা গেছে।
কিন্তু আশার আলো খুব একটা দেখতে পাচ্ছি না। অনেকটা সময়ও চলে গেছে। হায়ার অথরিটিকে
একবার জানানো দরকার। তুমি কাজ করো। দেখি, কোনও ভাবে তাঁদের খবরটা দেওয়া যায় কিনা।'
কথা
শেষ করে উঠতে যাচ্ছিল ও। মাথা নেড়ে মানা করল তাকায়ুর। গলাটা সামান্য ঝেড়ে নিয়ে
ঘড়ঘড়ে গলায় বলল, ‘দরকার নেই। মনে হচ্ছে, হয়ে যাবে। তুমি বরং এখানেই থাকো। দরকার
হতে পারে।’
এরপর
বেশ কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ পেরিফেরাল রুমে শুধু কী–বোর্ডের খটখট শব্দ। কী–বোর্ডের উপর তাকায়ুর
রোগারের দু’হাতের আঙুল চলছে প্রায় ঝড়ের গতিতে। একের পর এক কম্যান্ড দিয়ে চলেছে।
দ্রুত কম্যান্ড দিতে প্রশান্তরও জুড়ি নেই। তবু তাকায়ুরের কাজ দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছিল।
আসলে প্রতিটি কম্যান্ডই অত্যন্ত জটিল। তারপর কম্যান্ড দেবার পর ডিসপ্লে ইউনিটে প্রয়োজনীয়
সাড়া না পেলে মুহূর্তে পালটাতে হচ্ছিল। এ ব্যাপারে তাকায়ুরের দক্ষতা কিছু আঁচ করতে
পেরেছিল বলেই ওর কথা মনে পড়েছিল। কিন্তু এতটা স্বপ্নেও ভাবেনি। কিছুটা যেন ভরসা পাচ্ছিল
ও।
প্রায়
আধ ঘণ্টার মতো এভাবে চলার পরে ডিসপ্লে ইউনিটের দিকে তাকিয়ে প্রশান্ত টের পেল, সিস্টেম
অল্প হলেও ইমপ্রুভ করছে। প্রায় ছোঁ মেরে সামনে টেবিল থেকে টেলিফোনটা তুলে নিল। ভেবেছিল,
ডায়াল টোন পাওয়া যাবে। কিন্তু নিরাশ হতে হল। অথচ খানিক আগে ডিসপ্লে ইউনিট যখন আরও
খারাপ অবস্থায়, তাকায়ুর রিং ব্যাক করে কথা বলেছে ওর সঙ্গে! সকাল থেকে ঘটে যাওয়া
আরও কিছুর মতো এরও কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পেল না।
ওদিকে
শহর কলকাতার অন্যান্য টেলিফোন অফিসে ইতিমধ্যে হইচই শুরু হয়ে গেছে। কয়েকটি রুটে ব্যাপক
হারে কল ফেল হতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, নিজেদের ইউনিটেও শুরু হয়েছে গোলমাল।
বোস
সাহেব তখন চায়ের কাপ শেষ করে সকালের কাগজ খুলে বসেছেন। টেলিফোন বেজে উঠল। তুলতেই ও
প্রান্ত থেকে জি.এম মুখার্জি সাহেবের কণ্ঠস্বর, ‘এক্সচেঞ্জে কী হয়েছে মিস্টার বোস?’
‘কেন
স্যর?’ থতমত খেয়ে বোস সাহেব বললেন।
‘মানে?’
ধমকে উঠলেন মুখার্জি সাহেব, ‘সারা কলকাতা জেনে গেছে। ফোন এসেছে দিল্লি অফিস থেকেও,
আর আপনি কিছুই জানেন না!’
সাতসকালে
ধমক খেয়ে বোস সাহেবের তখন করুণ অবস্থা। তবে সামলে নিতে সময় লাগল না। বললেন তেমন কোনও
খবর তো পাইনি স্যর! কয়েক মিনিট সময় দিন। খোঁজ নিচ্ছি।’
আরও
দু’চার কথার পর জি.এম সাহেব যখন টেলিফোন ছাড়লেন, বোস সাহেব তখনও বেশ নিশ্চিন্ত। কিছু
সমস্যা হয়েছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশান্ত রায় কাজের মানুষ। সামলে নিতে পারবে বলেই
হয়তো আর জানায়নি। এমন আগেও হয়েছে।
কিন্তু
ভুল ভাঙতে দেরি হল না। বার কয়েক ডায়াল করেও অফিসের কোনও নম্বর পেলেন না। আওয়াজেই
টের পেলেন একটি কলও ম্যাচিওরড্ হল না। দ্রুত অফিসের কয়েকজন কর্মীর বাড়িতে ফোন করলেন
এবার। অন্য এক্সচেঞ্জের নম্বর। পেয়েও গেলেন কয়েকজনকে। কিন্তু তাতেও কয়েকটি কল ফেল
করল। এই ভোরে ট্রাফিকের চাপ যথেষ্টই কম। এমন হওয়ার কথা নয়। সিস্টেমে যে বড় রকমের
গোলমাল হয়েছে, এরপর বুঝতে বাকি রইল না তাঁর। টেলিফোনে যাদের পেলেন, অফিসে আসার নির্দেশ
দিয়ে চটপট তৈরি হয়ে নিলেন। প্রায় ঊর্ধ্বশ্বাসে বাড়ি থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি ধরে
ছুটলেন অফিসের দিকে।
ঘণ্টা
খানেক পরে যখন অফিসের সামনে পৌঁছেছেন দেখেন, জি.এম মুখার্জি সাহেবও নামছেন তাঁর গাড়ি
থেকে। উদ্বিগ্ন মানুষটি নিজেই ছুটে এসেছেন।
দুই
অফিসার যখন পেরিফেরাল রুমে ঢুকলেন, দারুণ উৎকণ্ঠায় প্রায় কাঠ হয়ে রয়েছেন। ভিতরে
ঢুকেই বোস সাহেব চোখ ফেলেছিলেন কাছেই এক ডিসপ্লে ইউনিটের দিকে। মুহূর্তে মাথা থেকে
মস্ত এক বোঝা নেমে গেল যেন। একদম ঠিক আছে ইউনিট। কিছুমাত্র গোলমাল নেই। ওধারে টি.টিওয়াই-এর
সামনে বসে টেলিফোনে রিপোর্ট নিচ্ছিল প্রশান্ত, ওদের দেখে উঠে দাঁড়াল। বোস সাহেব বললেন,
‘কী ব্যাপার মিস্টার রায়? সব তো ঠিকই রয়েছে, দেখছি। অথচ খানিক আগে ফোন করে অফিস ধরতে
পারিনি। একটি কলও ম্যাচিওরড হয়নি। কিছু প্রব্লেম হয়েছিল?’
‘ভাইরাস!'
প্রশান্ত
রায়ের কথায় শুধু বোস সাহেব নয়। পাশে জি.এম সাহেবও আঁতকে উঠলেন।
‘হ্যাঁ
স্যর‚ ভাইরাস। গোড়ায়
বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম, সামলে নিতে পারব। তাই এই ভোর সকালে কাউকে আর জানাইনি। তারপর
যখন ব্যাপারটা টের পেলাম, সিস্টেম তখন শেষ অবস্থায়। শুধু তাই নয়, জংশন দিয়ে ভাইরাস
অন্যান্য টেলিফোন এক্সচেঞ্জেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সে এক ভয়ানক অবস্থা। এতদিন
কাজ করছি, এমন অবস্থায় কখনও পড়িনি।’
‘অন্যান্য
এক্সচেঞ্জের খবর কিছু পেলেন?’ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে মুখার্জি সাহেব বললেন।
সেই
রিপোর্টগুলোই নিচ্ছিলাম স্যর। একদম ঠিক আছে এখন। ভাইরাস যা বাইরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল‚ প্রপারলি কোয়রান্টিন করা
গেছে। চিন্তা নেই। তবে এভাবে হঠাৎ ভাইরাস কী করে এল, সেটা ইনভেস্টিগেশন করা জরুরি।
ভবিষ্যতের কথা ভেবেই।’
‘ঠিক।’
মাথা নাড়লেন মুখার্জি সাহেব। ‘সি.জি.এম সাহেবের সঙ্গে আজই কথা বলব। আর এত বড় একটা
কাজ যেভাবে একা হাতে সামলেছেন, তাও জানাব ওনাকে। মেনি থ্যাংকস টু ইউ, মি. রয়।’
‘আমি
তো করিনি স্যর।’ জি.এম সাহেবের কথার উত্তরে মাথা ঝাঁকাল প্রশান্ত।
‘তাহলে?’
প্রায় একসাথে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন দুই অফিসার।
‘তাকায়ুর‚ তাকায়ুর রোগার।’
‘তাকায়ুর!’
জি.এম মুখার্জি সাহেবের চোয়াল প্রায় ইঞ্চি তিনেক ঝুলে পড়ল এবার।
‘হ্যাঁ
স্যর, তাকায়ুর। শেষ মুহূর্তে হঠাৎই মনে পড়েছিল ওর কথা। কোনওমতে যোগাযোগও করা গিয়েছিল।
ছুটে এসে সে-ই সব রেস্টোর করে দিয়ে গেছে। ডিপার্টমেন্ট থেকে ওর জন্য একটা ইনসেনটিভের
ব্যবস্থা করা দরকার। ভয়ানক বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন উনি।’ বলতে বলতে হাত কপালে ঠেকাল
প্রশান্ত।
‘মিস্টার
রয়, ঠিক দেখেছেন, তাকায়ুর রোগার এখানে এসেছিল?’ প্রায় রুদ্ধশ্বাসে মুখার্জি সাহেব
প্রশ্ন করলেন।
‘ক-কেন
সার, তাকায়ুর রোগারই তো! এতদিনের পরিচয়, চিনব না! এই তো কাজ শেষ করে আপনারা আসার
মিনিট কয়েক আগে চলে গেল।’
জি,এম
সাহেবের কথায় একটু যেন থতমত খেল প্রশান্ত।
‘অসম্ভব।’
প্রবল ভাবে মাথা ঝাঁকালেন মুখার্জি সাহেব, ‘তাকায়ুর রোগার আজ ভোরে কোনও দরকারে হোটেলের
গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিল। পথে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অবস্থা দেখে ড্রাইভার
হাসপাতালে নিয়ে যায়। হোটেলে খবর পৌঁছোতে তারা দিল্লিতে ওদের কোম্পানির ইনচার্জের
সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তিনি তখনই আমাকে ফোনে জানিয়েছেন ব্যাপারটা। বের হবার আগে আমিও
হাসপাতালে ফোন করে খবর নিয়েছি। তাই বুঝতেই পারছেন, ব্যাপারটা কিছুতেই সম্ভব নয়।’
জি.এম
সাহেবের ওই কথায় খানিক হাঁ করে তাকিয়ে রইল প্রশান্ত। ঢোঁক গিলে কিছু বলতে গিয়েও
থেমে গেল। ডাকাবুকো প্রশান্ত রায়ের সেই মুখের দিকে তাকিয়ে বোস সাহেব পাশে জি.এম সাহেবকে
বললেন, ‘স্যর, মনে হয় না মি. রায় ভুল দেখেছেন। সন্দেহ নেই, সুইচ রুমে কেউ ছদ্মবেশে
ঢুকেছিল। তবে তিনি আমাদের উপকার করতেই এসেছিলেন। অসময়ে হঠাৎ ভাইরাস অ্যাটাক! তারপর
এই রহস্যময় আগন্তুক! ব্যাপারটা খুবই সন্দেহজনক।’
মুখার্জি
সাহেব গভীরভাবে কিছু ভাবছিলেন। উত্তর দিলেন না। ইতিমধ্যে প্রশান্ত কিছুটা সামলে নিয়েছে।
বলল, ‘স্যর, তাকায়ুর সুস্থ হলে ওর সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই আমি।’
‘ঠিক।’
মৌনতা ভেঙে মুখার্জি সাহেব বললেন, ‘তবে তার আগে গেটে সিকিউরিটি ফোর্সের সঙ্গেও কথা
বলা দরকার।’
গেটে
চব্বিশ ঘণ্টাই কড়া প্রহরা। ডাক পড়তেই ছুটে এল তারা। যা জানা গেল, তাতে কপালের ভাঁজ
আরও ঘন হল ওদের। খানিক আগে ওই চেহারার একজন অফিস থেকে বেরিয়ে গেছেন। বিদেশি ভদ্রলোক
মাঝে মাঝেই আসেন এই অফিসে। গত কালও এসেছিলেন। পরিচিত মুখ, তাই সন্দেহ করেনি কেউ। তবে
আজ সকালে তাঁকে অফিসে কেউ ঢুকতে দেখেনি।
বোস
সাহেবের তলব পেয়ে ইতিমধ্যে একে একে অন্যান্য কর্মচারীরা আসতে শুরু করেছে। জি.এম সাহেব
সময় নষ্ট করলেন না। বোস সাহেবকে অফিসের দায়িত্ব দিয়ে প্রশান্তকে নিয়ে হাসপাতালের
উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন।
হাসপাতালে
পৌঁছে প্রথমেই অফিস থেকে তাকায়ুর রোগারের খোঁজ নিতে জানা গেল, খানিক আগে তাঁর জ্ঞান
ফিরে এসেছে। এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। চেকআপ করে বড় কোনও অস্বাভাবিকতাও পাওয়া যায়নি।
ইতিমধ্যে জাপান দূতাবাস থেকেও খোঁজ নেওয়া হয়েছে। আরও দু'এক দিন দেখে ছেড়ে দেওয়া
হবে।
অনুমতি
নিয়ে ওরা এরপর পেশেন্টের কেবিনে এল। তাকায়ুর ইতিমধ্যে উঠে বসেছে। ওরা ঢুকতেই কাঁচুমাচু
মুখে প্রশান্তকে বলল, ‘মাফ চাইছি বস। কথা বলতে বলতে লাইনটা তখন কেটে গেলেও ব্যাপার
গুরুতর বুঝে তক্ষুনি বের হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু পথের মাঝে মাথা ঘুরে কী যে হয়ে গেল!
এমন কিন্তু আগে আমার কখনই হয়নি।’
জি.এম
মুখার্জি সাহেবের বয়স বেশি নয়। কাজের মানুষ। প্রয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়তে জানেন। সেই
কারণে এই ভোরে অবস্থার গুরুত্ব বুঝে নিজেই ছুটে এসেছেন। তাকায়ুরের মুখ দেখে বেশ বুঝতে
পারছিলেন, হঠাৎ এই ব্যাপারে মানুষটি শুধু লজ্জিতই নয়, কিছুটা হতাশও।
ওকে
আশ্বস্ত করে দু’জন যখন হাসপাতাল থেকে বের হলেন মুখার্জি সাহেবের মুখ রীতিমতো থমথমে।
খানিক নীরবতার পর বললেন, ‘মিস্টার রয়, যাকে আপনি দেখেছেন, তিনি তাকায়ুর নয়। অবশ্যই
অন্য কেউ। এভাবে কে সুইচ রুমে ঢুকে পড়ল?’
প্রশান্ত
গভীরভাবে কিছু ভাবছিল। তখনই কোনও উত্তর দিল না। জি.এম সাহেবের অবশ্য থামার উপায় ছিল
না। দিন কয়েক আগেই দিল্লি থেকে টেলিফোন অফিসে অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য কনফিডেনসিয়াল
চিঠি এসেছে। বললেন, ‘এভাবে ভাইরাস অ্যাটাক আগে কখনও হয়নি, মিস্টার রয়। যেভাবে সেটা
ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল, সারা কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা স্তব্ধ হয়ে যেতে পারত।’
শুধু
জি.এম সাহেব নয়, ঝড় চলছিল প্রশান্তর মাথার ভিতরেও। সামান্য গলা ঝেড়ে নিয়ে কিছু
বলতে গিয়েও অল্প মাথা ঝাঁকাল শুধু।
ঘটনার
জের যে সহজে মেটার কথা নয়, তা বলাই বাহুল্য। ব্যাপারটা নিয়ে এরপর সি.জি.এম অর্থাৎ
চিফ জেনারেল ম্যানেজারের দপ্তরেও প্রায় তোলপাড়। সতর্কতার জন্য জারি হয়েছে কড়া সার্কুলার।
সি.জি.এম-এর ঘরেও ডাক পড়েছে প্রশান্তর। অগত্যা বাসায় ফিরতে প্রায় সন্ধে। দ্রুত স্নান
সেরে এরপর ক্লান্ত শরীরে শুয়ে পড়েছিল ও। বেলের আওয়াজে সেই ঘুম যখন ভাঙল, রাত তখন
নটা। ক্যাটারার রাতের ডিনার পৌঁছে দিতে এসেছে।
কলকাতা
শহরে হ্যাম অপারেটরদের জন্য একটু বেশি রাতই সেরা সময়। তবু রাতের খাওয়া শেষ হতে আর
দেরি করল না প্রশান্ত। হ্যাম রেডিও অন করে বসে পড়ল দশটার আগেই। হ্যাম রেডিয়োর কাজে
অসীম ধৈর্যের প্রয়োজন। প্রথমে ফ্রিকোয়েন্সি সিলেক্ট করে সঠিকভাবে অ্যান্টেনা টিউন।
তারপর কলসাইন দিয়ে অপেক্ষা। উত্তর না এলে ফ্রিকোয়েন্সি বদলে ফের গোড়া থেকে।
মাঝে
মাঝেই সাড়া আসছিল ওদিক থেকে। তাদের কেউ পরিচিত। কেউ আনকোরা নতুন। কিন্তু উত্তর না
দিয়ে অসীম ধৈর্যে প্রশান্ত আজ ফ্রিকোয়েন্সি বদলে যেতে লাগল। শেষে রাত প্রায় বারোটা
নাগাদ পাওয়া গেল সেই মানুষটাকে। হঠাৎই ও প্রান্ত থেকে কলসাইন সমেত উত্তর ভেসে এল,
‘গুড লিসনিং ফ্রেন্ড। ডাবল এক্স।’
প্রায়
লাফিয়ে উঠে ফের কল সাইন সমেত উত্তর দিল প্রশান্ত।
‘হ্যাঁ,
বলো বন্ধু। কেমন আছ?’ উত্তর এল ওদিক থেকে।
‘ভাল
আছি, বন্ধু।’ প্রশান্তর উত্তর, ‘আজ কয়েকটা অন্য প্রশ্ন করব তোমাকে। আশা করি উত্তর
পাব।’
‘নিশ্চয়ই।’
‘প্রায়
সময় তোমার কলসাইন চেঞ্জ হয়, বদলে যায় ফ্রিকোয়েন্সি। কেন বন্ধু?'
‘কী
করব?’ ও প্রান্তে মৃদু হাসি। ‘তোমার সঙ্গে কথা বলতে হলে অন্য কারো কলসাইন, ফ্রিকোয়েন্সি
তো ধার করতেই হবে।
‘তুমি,
তুমি তাহলে পৃথিবীর কেউ নও!’ উত্তেজনায় কেঁপে গেল প্রশান্তর গলা।
‘নই-ই
তো। সেটা বুঝতে তোমার দশ বছরের ওপর লেগে গেল দেখে অবাক লাগছে! আসলে তোমরা পৃথিবীর মানুষ
এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছ।’
‘কোন
গ্রহের মানুষ তোমরা?’
‘ভাইরাস।’
‘ভাইরাস!’
থতমত খেয়ে প্রশান্ত বলল।
‘হ্যাঁ,
ভাইরাস। আমাদের গ্রহের নাম। তবে তোমাদের মতো মানুষ নই। হাত-পাও নেই। আছে অন্য রকম ব্যবস্থা।’
‘কিন্তু,
কিন্তু তোমাকে তো হাত-পাওয়ালা মানুষই দেখলাম। এসেছিলে তাকায়ুর রোগারের চেহারায়।’
‘ওটা
একটা হলোগ্রাম, থ্রি-ডায়মেনশন্যাল ইমেজ বলতে পারো। তবে ইমেজ হলেও তার কাজ করার ক্ষমতা
যে রয়েছে, সে তো দেখতেই পেলে। এজন্য বেচারা তাকায়ুর রোগারকে ট্রাবল দিতে হল বলে দুঃখিত।
কিন্তু এ ছাড়া তোমার সম্মান, সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বাঁচাতে অন্য কোনও উপায়
ছিল না। ও.এম.সি-তে যে ভয়ানক ম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম ছড়ানো হয়েছিল, শুধু কলকাতা
নয়, সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তছনছ হয়ে যেতে পারত। তারপর…’
ওই
সময় রেডিওয় হঠাৎ নয়েজ শুরু হতে কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে গিয়েছিল ওদিকের কণ্ঠস্বর।
কিন্তু ফিরে এল একটু পরেই। ‘শুনতে পারছ, বন্ধু?’
‘হ্যাঁ,
শুনতে পারছি।’ প্রায় রুদ্ধশ্বাসে প্রশান্তর উত্তর।
‘মনে
হচ্ছে, আজ আর বেশিক্ষণ কথা বলা যাবে না। আসলে আমাদের এই গ্রহ পৃথিবী থেকে প্রায় বিশ
হাজার আলোকবর্ষ দূরে। অন্য এক গ্যালাক্সিতে।’
‘বিশ
হাজার আলোকবর্ষ!’ বিস্মিত কণ্ঠ প্রশান্তর।
‘হ্যাঁ,
বিশ হাজার আলোকবর্ষ। তবু যে এভাবে কথা বলতে পারি, তা মহাজাগতিক এক বিশেষ তড়িৎ কণার
সাহায্যে। মহাশূন্যের কেন্দ্র থেকে বিচ্ছুরিত এই তড়িৎ কণার রহস্য অনেকটাই ভেদ করতে
পেরেছি আমরা। পৃথিবীর দিকে ছুটে যাওয়া এই তড়িৎ কণার সঙ্গে রেডিয়ো তরঙ্গ সঠিক ভাবে
জুড়ে দিতে পারলেই সেগুলো মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীতে পৌঁছে যেতে পারে। পৃথিবী থেকে রেডিও
তরঙ্গও পৌঁছে যায় আমাদের কাছে। কিন্তু সমস্যা হল, পৃথিবীর দিকে ছুটে যাওয়া এই তড়িৎ
কণা…’
কথা
শেষ হবার আগেই হঠাৎ ফের নয়েজ শুরু হয়ে গেল। কেটে গেল সংযোগ। এমন অভিজ্ঞতা হ্যাম অপারেটরদের
প্রতিদিনই হয়ে থাকে। একজনের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে হ্যাম অপারেটর তৎক্ষণাৎ
অন্য কোনও বন্ধুকে খুঁজতে লেগে যায়। রাত এখন বেশি নয়। সবে সাড়ে বারোটার মতো। কিন্তু
প্রশান্ত আজ আর তেমন করল না। রেডিও অফ করে নিশ্চিন্তে শুয়ে পড়ল।
অচেনা
বন্ধুর সঙ্গে অনেক কথা বাকি রয়ে গেল।
ছবি: প্রকাশ গুপ্ত
darun laglo pore
ReplyDeleteDarun Golpo....
ReplyDeleteখুব ভালো
ReplyDeleteগল্প টি পড়ে খুব ভাল লাগল। হ্যাম অপারেটর টা নিজেদের কল সাইন কি ইচ্ছে মত বদলে ফেলতে পারেন । এ ব্যাপারে কি কোনও নোটিফিকেসন দিতে হয় কি? ভয়েস ইন হলে ই তো কলারের লোকেশন জানা যায় । না জানা গেলে সেটি নিয়ে সতর্কীকরণ কি আসে না?
ReplyDeleteUh... Ki koThin eisob technical byapar syapar....
DeleteValo laglo sir
ReplyDeleteAapnar lekhar jonnyo research work asadharon. ... Eta golpo k ek anyo matray niye jay. Highly informative n very pleasing fact.
ReplyDeleteHam Operator baper ta alpo alpo jantam but bishes dharona chilo na..golpo ta pore khub i valo laglo...Thnks diye choto korbo na....
ReplyDeleteখুব ভালো লাগল।
ReplyDeleteঅসাধারণ গল্পটা ৷ভিনগ্রহ থেকে একজন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো ৷বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করলো৷ দুর্দাম্ত৷
ReplyDeleteASADHRAN/
ReplyDeleteDarun... Apnar golpo sob guloi porte valo lage..
ReplyDelete