ভীমের পান্টি
শিশির বিশ্বাস
১৭৮০ সালের কথা।
অবিভক্ত বাংলার রাজশাহী জেলার পূর্বপ্রান্তে ধামাইরহাট অঞ্চলটি তখন বাদাল নামেও
পরিচিত। প্রবাদ‚ বহু বছর আগে
এখানে বাদাল নামে এক নগর ছিল। স্থানটির ব্যবসায়িক গুরুত্ব থাকায় ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানি এখানে রেশম আর নীলের চাষের জন্য কুঠি নির্মাণ করেছিলেন। ওই
বছর কুঠির প্রধান হয়ে এলেন চার্লস উইলকিনস। এদেশের ইতিহাস এবং
প্রত্নতেত্ত্বর উপর মানুষটির গভীর আগ্রহ ছিল। সেই টানে শিখেছিলেন
সংস্কৃত ভাষাও। বাদাল কুঠির দায়িত্ব নেবার অল্পদিনের মধ্যেই তাঁর কানে এল
কাছেই মঙ্গলবাড়ির ভীমের পান্টির গল্প।
গল্পটা মহাভারতের। তবে তার আগে বলা
দরকার‚ স্থানীয় শব্দ পান্টি হল রাখালের গরু চরাবার লাঠি। বারণাবতে জতুগৃহ
কাণ্ডের পরে পঞ্চপাণ্ডব মা কুন্তিকে নিয়ে যখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন‚ ওই সময় ভীমের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় হিড়িম্বা
রাক্ষসীর। হিড়িম্বার ইচ্ছা পূর্ণ করতে ভীম তাকে বিবাহ করেন।
সর্ত ছিল‚ হিড়িম্বার একটি পুত্রসন্তান না হওয়া পর্যন্ত
ভীম তাঁকে সঙ্গ দেবেন। হিড়িম্বা এরপর ভীমকে নিয়ে আকাশপথে এই বাদালে এসে
পৌঁছোন। এখানে মানুষ তখন চাষবাস জানত না। তাই দেখে ভীম
পতিত জমি উদ্ধার করে চাষবাস শুরু করেন। কিছুদিন পরে হিড়িম্বার গর্ভে ঘটোৎকচের জন্ম হল। সর্ত অনুসারে ভীমও ফিরে গেলেন ভাইদের কাছে। তবে
যাবার আগে তাঁর গরু চরাবার লাঠি তথা পান্টি মাঠের মাঝে গুঁজে রেখে গেলেন।
মহাবলী ভীমের সেই গাছের গুঁড়ির মতো লাঠি কালক্রমে পাথরে পরিণত হলেও আজও তেমনই
পোঁতা রয়েছে।
ভীমের পান্টি তথা বাদাল স্তম্ভ
খবরটি কানে আসার পরে উৎসাহী উইলকিনস সাহেব আর দেরি
করেননি। ছুটেছিলেন সেই দিকে। আর তারই ফলশ্রুতিতে খুলে
গিয়েছিল বাংলার হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের একটি ছেঁড়া পাতা।
স্থানীয় অজ্ঞ মানুষ ভীমের গল্প ফাঁদলেও কালো
কষ্টিপাথরে ( Black Basalt) নির্মিত অর্ধভগ্ন স্তম্ভটি (বর্তমান উচ্চতা ১৬ ফুট ৯ ইঞ্চি, গোড়ার দিকের পরিধি প্রায় ৬ ফুট।) দেখে উইলকিনস সাহেবের
সেদিন বুঝতে বাকি থাকেনি‚ পাথরের স্তম্ভটি আসলে কী। প্রাচীন কালের
এমন একাধিক স্তম্ভ তিনি দেখেছেন। চিনতে ভুল হবার কথা নয়। প্রাচীন ভারতে
এমন স্তম্ভ স্থাপন করা হত সম্রাট বা রাজার প্রশস্তি‚ কীর্তিকথা অথবা কোনো
নির্দেশ প্রচারের জন্য। পূণ্যার্জনের জন্যও ইষ্টদেবতার প্রশস্তি করেও স্তম্ভ
স্থাপনা হত। সেই প্রশস্তি লিপিবদ্ধ থাকত স্তম্ভের গায়ে।
বর্তমান স্তম্ভটিতে তেমন কিছু না দেখে গোড়ায় তিনি কিছু অবাকই হয়েছিলেন।
কিন্তু নিরাশ না হয়ে উপস্থিত কর্মচারীদের স্তম্ভটির গায়ে জমে থাকা পুরু কাদা আর
মাটির আস্তরণ সাফ করার নির্দেশ দিলেন। আর তারপরেই যা নজরে পড়ল‚ অতটা তিনি স্বপ্নেও আশা করেননি। দু’এক লাইন নয়‚ স্তম্ভটির নীচের দিকে দশম শতকের সিদ্ধং
লিপিতে সংস্কৃত ভাষায় লেখা ২৮ লাইনের এক সুবৃহৎ শিলালিপি।
প্রতিটি লাইন দৈর্ঘ্যে প্রায় ২১ ইঞ্চি। প্রস্থে ০.৫ ইঞ্চির মতো। মূল ব্রাহ্মী থেকে উদ্ভূত এই সিদ্ধং লিপির
পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকেই বর্তমান বাংলা লিপির উদ্ভব। পাল আমলে বাংলায় এই সিদ্ধং লিপিই প্রচলিত ছিল।
বাদাল স্তম্ভের প্রশস্তিলিপি
পাঠোদ্ধারের পর উইলকিনস সাহেব ১৭৮৮ সালে এশিয়াটিক
সোসাইটির জার্নালে এটি ‘বাদাল
স্তম্ভ’লিপি নামে প্রকাশ করলেন। জানা গেল‚ পালরাজ নারায়ণপালের রাজত্বকালে (আ. ৮৭৩–৯২৭ খ্রি) তাঁর ব্রাহ্মণ মন্ত্রী ভট্ট গুরবমিশ্র নিজ বাসস্থানের কাছে
ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশে এই গরুড়স্তম্ভটি স্থাপনা করেছিলেন।
এদেশে প্রাপ্ত অন্যান্য স্তম্ভলিপি থেকে বাদাল
স্তম্ভের শিলালিপির প্রকৃতি অনেকটাই ভিন্ন গোত্রের। সেই কারণে
বিষয়টি একটু বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ রাখে। সাধারণত এই জাতীয় স্তম্ভ
যিনিই প্রতিষ্ঠা করুন‚ শিলালিপিতে দেশের রাজা‚ সম্রাট অথবা ইষ্টদেবতার
প্রশস্তিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠাতার নাম উল্লেখ থাকে মাত্র।
কিন্তু বাদাল স্তম্ভের সুদীর্ঘ শিলালিপিতে মূলত রয়েছে মন্ত্রী ভট্ট গুরবমিশ্রের
বংশ গরিমার কথা। পাল রাজাদের কথা এসেছে প্রসঙ্গক্রমে। যেমন ১৫ নং
শ্লোকে বলা হয়েছে‚ ভট্ট গুরবমিশ্রের পিতা
কেদারমিশ্রের যজ্ঞ অনুষ্ঠানে পালরাজ শূরপাল স্বয়ং উপস্থিত হয়ে নতশিরে পবিত্র
শান্তিবারি গ্রহণ করে ধন্য হয়েছিলেন। গর্বভরে গুরবমিশ্র
জানাচ্ছেন‚ সম্রাট দেবপাল স্বয়ং পরামর্শ গ্রহণের জন্য
তাঁর প্রপিতামহ প্রধান মন্ত্রী দর্ভপাণির গৃহদ্বারে প্রতীক্ষায় থাকতেন (শ্রীদেবপাল
নৃপতি বরসভাপেক্ষায় দ্বারি যস্য)। মন্ত্রী কেদারমিশ্রের
বিচক্ষণতায় দেবপাল হূন এবং গুর্জররাজের দর্প চূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন (হৃতহূনগর্বং
খর্বীকৃত দ্রবিড় গুর্জরনাথ দর্পম)। রয়েছে এমন আরও অনেক বিষয়।
বাদাল স্তম্ভের প্রশস্তিলিপির অংশবিশেষ
বাদাল স্তম্ভের এমন ব্যতিক্রমী প্রশস্তি লিপির কারণ
বুঝতে হলে তৎকালীন পাল সাম্রাজ্যের দিকে একটু নজর দেওয়া দরকার।
সেসময় পাল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল মগধ (বর্তমান বিহার)।
রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র অথবা মুদগগিরি (বর্তমান মুঙ্গের)। তবে তাঁদের আদি
নিবাস ছিল বাংলার বরেন্দ্রী অঞ্চলে। বর্তমান দিনাজপুর‚ রাজশাহী‚ নওগাঁ প্রভৃতি অঞ্চল নিয়ে
গঠিত সেকালের বরেন্দ্রীকে তাঁরা ‘জনকভূ’ অর্থাৎ জন্মভূমি বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রথম পাল নৃপতি গোপালের উত্থান এই বরেন্দ্রীতেই। স্বভাবতই
বরেন্দ্রীর প্রতি পাল রাজাদের কিছু দুর্বলতা ছিল। বিখ্যাত
পাহাড়পুর (সোমপুর) বৌদ্ধ বিহার এই বরেন্দ্রীতেই তাঁরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বর্তমান বাদাল স্তম্ভের অবস্থান তৎকালীন এই বরেন্দ্রীর প্রায় কেন্দ্রে।
মন্ত্রীসভায় অতি গুরুত্বপূর্ণ ভট্ট পরিবারের গুরবমিশ্রকে বরেন্দ্রী শাসনের জন্য
নিয়োগ করা হয়েছিল। তিনি বরেন্দ্রীতেই অবস্থান করতেন।
ভট্ট গুরবমিশ্র যে পালরাজার মন্ত্রী ছিলেন‚ সেই নারায়ণপাল ছিলেন একেবারেই দুর্বল
প্রকৃতির মানুষ। পরিণামে পাল সাম্রাজ্যের তখন নিতান্তই দৈন্যদশা।
বহিঃশত্রুর আক্রমণে বিশাল সাম্রাজ্যের সামান্যই অবশিষ্ট। প্রকৃত অর্থে
মগধ অর্থাৎ বর্তমান বিহারের বাইরে পালরাজাদের কর্তৃত্ব তেমন আর অবশিষ্ট ছিল না।
স্বভাবতই পাল রাজধানী থেকে অনেকটাই দূরে হবার কারণে বরেন্দ্রীতে নারায়ণপালের
কর্তৃত্ব প্রায় ছিল না বললেই চলে। ভট্ট গুরবমিশ্র পদমর্যাদায় মন্ত্রী হলেও প্রায়
স্বাধীন রাজার মতোই বরেন্দ্রী শাসন করতেন। বাদাল স্তম্ভের
প্রশস্তিলিপিতে তিনি তাই নিজ বংশ গরিমার কথা ব্যক্ত করতে গিয়ে স্বয়ং পাল রাজাদের
মহিমা খাটো করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি।
বলা যায়‚ সেই
কারণেই বাদাল স্তম্ভ লিপিতে পাল রাজাদের সম্পর্কে কিছু প্রকৃত তথ্যও প্রকাশ পেয়েছে।
যেমন‚ দেবপালের
মুঙ্গের তাম্রশাসনের প্রশস্তিতে তাঁর রাজ্যসীমা দক্ষিণে সুদূর রামেশ্বর সেতুবন্ধ
পর্যন্ত দাবি করা হলেও বাদাল স্তম্ভে বিন্ধ্যপর্বত উল্লেখ করা হয়েছে।
অহেতুক প্রশস্তির দায় না থাকায় গুরবমিশ্র সম্ভবত এখানে প্রকৃত তথ্যই ব্যক্ত করেছেন।
যাই হোক‚ পাল সাম্রাজ্যের সেই দুর্দশা পরবর্তীকালে কিছুটা ঘোচাতে
পেরেছিলেন নারায়ণপালের পুত্র রাজ্যপাল (আ. ৯২৭–৯৫৯)। আর তা পূর্ণতা পেয়েছিল প্রথম মহীপালের (আ. ৯৭৭–১০২৭) রাজত্বকালে।
বাংলার পাল সাম্রাজ্য অনেকটাই আবার পূর্ণ মহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
সমগ্র বাংলা তিনি জয় করতে না পারলেও বর্তমান বিহার এবং উত্তরপ্রদেশ তাঁর অধিকারে
ছিল। কিন্তু তারপর দ্বিতীয় মহীপালের (আ. ১০৭০–১০৭১) রাজত্বকালেই বরেন্দ্রীতে ঘটে গিয়েছিল
তৎকালীন পরিপ্রেক্ষিতে এক যুগান্তকারী ঘটনা। কৈবর্ত বিদ্রোহ।
মৎস্যজীবী কৈবর্ত বীর দিবোকের নেতৃত্বে বরেন্দ্রীর সাধারণ মানুষ বিদ্রোহ ঘোষনা
করেছিলেন। সেই বিদ্রোহ দমন করতে এসে পরাজিত এবং নিহত হয়েছিলেন রাজা
দ্বিতীয় মহীপাল। বরেন্দ্রীতে
প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কৈবর্ত শাসন।
দিবরদিঘি ও কৈবর্ত স্তম্ভ
সেই বিদ্রোহে কী মদত ছিল ভট্ট গুরবমিশ্রের
উত্তরসূরিদের? তাঁরা কী
কৈবর্তরাজের মন্ত্রী পদেও অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন? সন্ধাকর নন্দীর
রামচরিত গ্রন্থে বরেন্দ্রীর কৈবর্ত শাসন যেভাবে প্রশংসিত হয়েছে‚ তাতে সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সাধারণ মানুষের জলকষ্ট দূর করবার জন্য দিবোক যে সুবিশাল দিঘি খনন করেছিলেন‚ তা আজও দিবরদিঘি নামে বর্তমান।
দিঘির মাঝে প্রতিষ্ঠিত গ্রানাইট পাথরের বিশাল স্তম্ভটি আজও কৈবর্ত স্তম্ভ নামে
পরিচিত। দোর্দণ্ডপ্রতাপ পাল সম্রাট ধর্মপাল বা দেবপালের কথা বাংলার
মানুষ ভুলে গেছে। ভোলেনি বরেন্দ্রীর কৈবর্ত রাজা দিবোকের কথা।
বারান্তরে এই কৈবর্ত স্তম্ভ নিয়েও কিছু বলার ইচ্ছে রয়েছে।
ইতিহাস ছেড়ে এবার বাদাল স্তম্ভের কিছু অন্য প্রসঙ্গ।
আগেই বলা হয়েছে‚ এটি গড়ুর স্তম্ভ।
স্তম্ভ-শীর্ষে ছিল গড়ুর মূর্তি। ঊর্ধ্বাংশ ভগ্ন হবার কারণে মূর্তিটি অন্তর্হিত।
সন্দেহ নেই‚ ভট্ট গুরবমিশ্র বংশ পরম্পরায় বিষ্ণুর উপাসক
ছিলেন। গৃহ সংলগ্ন পারিবারিক বিষ্ণু মন্দিরের সামনেই হয়তো
স্তম্ভটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে যে স্থানে স্তম্ভটি অবস্থিত‚ সেখানে কোনো ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া
যায়নি। অথচ প্রশস্তি লিপিতে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে স্তম্ভটি
মন্ত্রী ভবনের একাংশে প্রতিষ্ঠিত। এযাবৎ আলোচনায় বোঝা যায়‚ পদে মন্ত্রী হলেও ভট্ট
গুরবমিশ্র রাজার সমতুল্য ছিলেন। তাঁর বাসস্থান রাজপ্রাসাদের সমতুল্য ছিল বলা যায়। অত
বড় প্রাসাদ তুল্য গৃহের কোনো ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান নেই‚ তাই কী সম্ভব? প্রাসাদের
ধ্বংসাবশেষ পাওয়া না গেলেও স্তম্ভটির প্রায় ১৫০ মিটার উত্তরে একটি ঢিপি বর্তমান।
জানা যায় সেটি একটি সুপ্রচীন শিব মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। সম্প্রতি সেই
ঢিপির উপর একটি হরগৌরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বাদাল স্তম্ভের অদূরে প্রাচীন শিব মন্দিরের
ভগ্নাবশেষপূর্ণ ঢিপি। ইনসেটে ওই ঢিপির উপর সম্প্রতি নির্মিত মন্দির।
বাদাল স্তম্ভের কাছে কিছু পাওয়া না গেলেও সুপ্রাচীন
একাধিক ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া গেছে কয়েক মাইল দূরে আমাইর‚ জগদল‚ যোগীর‚ ঘোপা প্রভৃতি স্থানে।
মাত্র বারো কিলোমিটার দক্ষিণে পাল আমলে নির্মিত বিখ্যাত পাহাড়পুর (সোমপুর) বিহারের
ধ্বংসাবশেষ। বর্তমান প্রতিবেদকের ধারণা‚ ওই অঞ্চলের কোথাও ভট্ট পরিবারের বাসস্থান ছিল। পরবর্তী মুসলমান
আমলে রাজনৈতিক পট–পরিবর্তনের
কারণে ভট্ট পরিবার হয়তো দেশত্যাগ করেন। ভগ্ন ধ্বংসাবশেষের
মাঝে অনাদরে পড়ে থাকা গড়ুর স্তম্ভটি পরবর্তীকালে স্থানীয় কোনো রাজা বা পূণ্যার্থীর
উদ্যোগে তুলে এনে স্থাপন করা হয় বর্তমান স্থানে শিব মন্দিরের সামনে। পরে
সেই মন্দিরও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে স্তম্ভের উপরের অংশও।
তৎকালীন ভট্ট পরিবারের বিপুল প্রভাবের কিছু নিদর্শন এখানে
কিন্তু আজও বর্তমান। প্রশস্তিলিপিতে গুরবমিশ্রের পিতা কেদারমিশ্রের যে
যজ্ঞ অনুষ্ঠানে পালরাজ শূরপাল স্বয়ং উপস্থিত হয়ে নতশিরে পবিত্র শান্তি তথা
মঙ্গলবারি গ্রহণ করে ধন্য হয়েছিলেন‚ সেই
মঙ্গলবারি প্রদান অনুষ্ঠান পাল আমলের পরেও বহুকাল যাবত এখানে প্রচলিত ছিল।
নানা স্থান থেকে অসংখ্য মানুষের সমাগম হত। মেলা বসত।
বর্তমানে মঙ্গলবারি অনুষ্ঠান না হলেও প্রতি বছর বৈশাখ মাসে এখানে বড় একটি মেলা বসে। আর
গ্রামের নাম মঙ্গলবাড়ি যে সেই ‘মঙ্গলবারি’ নামের রূপান্তর‚ তাতে সন্দেহ নেই।
প্রতি মঙ্গলবার মঙ্গলবাড়িতে একটি বড় হাট বসে।
ভীমের পান্টি তথা ঐতিহাসিক বাদাল স্তম্ভ বর্তমানে খুব
ভাল অবস্থায় রয়েছে‚ এমন নয়।
দীর্ঘ স্তম্ভটির মাঝ বরাবর বিপজ্জনক ফাটল। ইংরেজ আমলে সেই ১৯২৯ সালে
নিরাপত্তার জন্য স্তম্ভের চারপাশ বাঁধিয়ে রেলিং দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। সেই
রেলিং নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বহুদিন। অমূল্য প্রত্নসামগ্রীটি রয়েছে প্রায় অরক্ষিত অবস্থায়। আশা
করা যায়‚ স্থানীয় প্রশাসন বাংলার অতীত ইতিহাসের নিদর্শনটি রক্ষায় উপযুক্ত ব্যবস্থা
নেবেন।
বাদাল স্তম্ভের বর্তমান অবস্থান: বাংলাদেশে নওগাঁ জেলা সদর থেকে ৬৭ কি.মি ধামইরহাট।
সেখান থেকে ১০ কি.মি মঙ্গলবাড়ি ভীমের পান্টি।
আলোকচিত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সৌজন্যে
Bangla ar gota bharotborshei ekhane okhane kato eirakom ojana itihaas chhorie achhe. Apni aro beshi kore sangraho korun. Eirakom nibandho aro chai!
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো পরে ,সমৃদ্ধ হলাম
ReplyDeleteকৈবর্ত স্তম্ভ সম্মন্ধে লেখার অনুরোধ রইলো ...ভালো থাকবেন
Khoob samriddh holam
ReplyDelete