সহচর
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
সঙ্গী ভদ্রলোক হঠাৎ
আবিষ্কার করলেন সামনের একখানা ছয়বার্থের সেকেণ্ড ক্লাস রিজার্ভ করেছেন তারই
পরিচিত একদল এবং তাদের বার্থ খালি যাচ্ছে একখানা। খবরটা সংগ্রহ হতে-না-হতে হৈ-হৈ
করে তিনি মালপত্র টেনে নামালেন। যাওয়ার সময় এক গাল হেসে বলে গেলেন, ‘ভালোই হ’ল মশাই আপনার। এখন আপনি একচ্ছত্র। বেশ সম্রাটের মতো ঘুমিয়ে যেতে পারবেন।’
‘সম্রাট’, ‘একচ্ছত্র’‚
এ-সব ভালো কথা শোনবার আগেই আমি অনুমান করেছিলাম, বাইরের কার্ডে যার নাম ছিল,
তিনি এ কালের একজন দিপাল সাহিত্যিক। আমি তাঁকে, অবশ্য কখনও দেখিনি; কিন্তু তার ছবির সঙ্গে এ ভদ্রলোকের
চেহারারও সাদৃশ্য ছিল যথেষ্ট, তাই একখানা কুপে’তে ওপরের বার্থে এমন একজন ভয়ঙ্কর বিখ্যাত সঙ্গীকে নিয়ে ট্রেন যাত্রার
কল্পনায় রীতিমতো শঙ্কিত ছিলুম আমি।
সাহিত্য এবং সাহিত্যিক--
দুটোকেই আমি নিদারুণ ভয় করি। আমি কাজ করি স্ট্যাটিসটিসে এবং এ কথা স্বীকার করতে
লজ্জা নেই সংখ্যাতত্ত্বের কাছে রসতত্ত্বের স্বাদ অত্যন্ত জোলো বলে মনে হয় আমার
কাছে। সারা ভারতবর্ষে বছরে কোন্ ভাষার কত বই ছাপা হয় তার হিসেব মোটামুটি একটা
দিতে পারি, কিন্তু ঊর্ধ্ব লোকবিহারী সাহিত্যিক মহারথীটি যদি হঠাৎ জিজ্ঞাসা করেন তার
কী কী বই আমি পড়েছি‚
তাহলেই গেছি। মানসাঙ্কে ফেল করা ছাত্রের মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া
নাস্ত্যেব গতিরন্যথাঃ।
কাজেই তিনি নেমে যেতে বেশ
খানিকটা স্বস্তিই অনুভব করলুম সন্দেহ কী! বেশ নিজের মতো বিছানা পেতে নিলুম।
গুছিয়ে নিলুম জিনিসপত্র। তারপর আরাম করে হাত-পা ছড়িয়ে মুখাগ্নি করলুম সিগারেটে।
হাওড়া থেকে যখন ট্রেনটা
ছাড়ল সেই স্বস্তির আমেজে তখনও ভরপুর হয়ে আছি। পর পর উল্কাবেগে যখন কয়েকটা
স্টেশন ছিটকে বেরিয়ে গেল,
তখনও। কিন্তু আলো নিভিয়ে শোওয়ার উপক্রম করতেই কি রকম একটা অদ্ভুত
অশান্তি আমাকে পেয়ে বসল।
হঠাৎ মনে হতে লাগল, আমি একা। শুধু এই
ছোট কামরাটুকুর ভেতরেই নয়‚
এই বিরাট ট্রেনটাতে আমি একা ছাড়া আর কোথাও কোন যাত্রীই নেই। একটা অতিকায় ভুতুড়ে
গাড়ি আমাকে নিয়ে একরাশ অজানা অন্ধকারের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়েছে। কোথায় যাচ্ছে আমি
জানি না, হয়তো গাড়িটারও সেকথা জানা নেই।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমি
উঠে বসলুম, আলো জ্বেলে দিলুম। আর তীক্ষ তীব্র আলোর একটা ঝাপটা চোখে এসে লাগবার
সঙ্গে-সঙ্গেই অস্বস্তির ঘোরটা কেটে গেল। সত্যি কথা বলতে গেলে, হাসিই পেল আমার। সাহিত্যিকের সঙ্গগুণ আছে বটে। ভদ্রলোক আমার সহযাত্রী না
হতেই তার ব্যাধি এসে আমাকে ছুঁয়েছে‚
সঙ্গে থাকলে আর রক্ষা ছিল না দেখা যাচ্ছে। কী করে যে এসব উদ্ভট কল্পনা মাথায় এল‚ আশ্চর্য!
একগ্লাস জল খেয়ে, একটা আলো জ্বেলে
রেখে শুয়ে পড়লুম আবার।
কিন্তু চোখের কাছে আলো
জ্বললে আমার কিছুতেই ঘুম আসে না। বিরক্ত হয়ে আমি এপাশ-ওপাশ করতে লাগলাম। অথচ আলো
নিবিয়ে দিতেও সাহস হচ্ছে না‚
পাছে আবার ওই সমস্ত এলোমেলো ভুতুড়ে ভাবনা আমাকে পেয়ে বসে। চোখের পাতা দুটোকে
যথাসাধ্য চেপে ধরে প্রাণপণে ঘুমের সাধনা শুরু করলুম।
সেও মাত্র কিছুক্ষণের
জন্য। তার পরেই একটা নতুন ভাবনা আমাকে পেয়ে বসল। বড় বেশী জোরে যাচ্ছে নাকি
গাড়িটা‚ বড় বেশী অস্বাভাবিক
স্পীডে? যতগুলো রেলওয়ে অ্যাকসিডেন্টের খবর জানি‚ একটার পর একটা মনে পড়ে যেতে লাগল সেসব। অন্ধকারের ভিভতর
দিয়ে অন্ধের মতো ছুটছে ট্রেনটা‚
পার হয়ে যাচ্ছে ঘুমন্ত গ্রাম, শুন্য প্রান্তর, কালো জঙ্গল,
নদীর পুল। এই নির্জন নিশীথ যাত্রা যেন ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া
ছাড়া আর কিছুই নয়। কে বলতে পারে কোথায় আলগা হয়ে আছে একটা ফিস প্লেট, কোথায় ব্রীজের পিলারে ধরছে ফাটল! মুহুর্তের ভেতরে লাইন থেকে ছিটকে পড়ে
যেতে পারে ট্রেনটা, তারপর আবার আমি নিজের ওপরে বিরক্ত হয়ে
উঠলাম। কী আশ্চর্য কেন এ সমস্ত অবান্তর অর্থহীন ভাবনা আমার! প্রতিদিন, প্রতিরাত এমনি অসংখ্য ট্রেন সারা ভারতবর্ষময় ছুটে বেড়াচ্ছে, তাদের ক’খানাতে অ্যাকসিডেন্ট হয়? দুর্ঘটনা ঘটার ভয় আমার যত বেশী, তার চাইতেও বেশী
রেল কোম্পানীর‚ যারা এই গাড়ি চালিয়ে
নিয়ে যাচ্ছে, তাদের। কম করেও তিন-চারশো মানুষের প্রাণের দায়িত্ব যাদের হাতে, এ সব ভাবনা আমার চাইতে ঢের বেশীই ভাবছে তারা।
আমি আবার উঠে পড়লুম।
টয়লেটে ঢুকে মাথায় চোখে ঠাণ্ডা জল দিলুম খানিকটা। একা গাড়িতে এভাবে চলবার
অভিজ্ঞতা জীবনে আমার প্রথম নয়‚
যে জন্যে এই সমস্ত ছেলেমানুষী দুশ্চিন্তা আমাকে পেয়ে বসবে! কোনো কারণে মাথা গরম
হয়ে গেছে, তাই এই কাণ্ড।
দুটো পাখারই রেগুলেটার পুরো
ঠেলে দিয়ে গাড়ি অন্ধকার করে আবার শুয়ে পড়লুম। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই সেই অদ্ভুত
ভয়টা যেন বুকের ওপরে এসে চেপে বসতে লাগল। মনে হতে লাগল, কোথায় কী যেন
ঘটতে চলেছে‚ কী একটা নিশ্চয় ঘটবে।
আজ হোক কাল হোক‚ এই গাড়িতে হোক‚ বা পরে হোক। আরো মনে হতে লাগল, এই গাড়িতে এখন
আর আমি একা নেই, আমার সঙ্গে আর কেউ‚ অথবা আর কিছু একটা চলেছে। আমার
এই বার্থটার নীচেই সে গুড়ি মেরে বসে আছে। একবার মাথা নামিয়ে নীচের দিকে তাকালেই
আরো দুটো জ্বলজ্বলে চোখ আমি দেখতে পাবো।
কিন্তু এইবারে আমি নিজের
ওপরে চটে উঠলুম। পাগল হয়ে যাচ্ছি নাকি আমি! কোন কারণ নেই কোন অর্থ নেই, তবু পৃথিবীর যত
অবাস্তব উদ্ভট কল্পনা আমাকে পেয়ে বসেছে! হালে কতকগুলি বিলিতী ভূতের গল্প
পড়েছিলাম, হয়তো তারই প্রতিক্রিয়া এসব
এই অদ্ভুত অস্বস্তি থেকে
নিজেকে মুক্ত করার জন্যে এবার আমি মনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করলুম দস্তুবমতো।
প্রাণপণে ভাবতে চেষ্টা করলুম সংখ্যাতত্ত্বের কতকগুলি জটিল সমস্যা যা ভেড়া গোনবার
চাইতেও কার্যকরী। তারপর প্রায় আরো এক ঘণ্টা পরে গাড়ি খড়গপুর ছাড়িয়ে গেল, আমার চোখে ঘুম
নেমে এল।
কিন্তু কে জানত জেগে
থাকার চাইতেও আরও বীভৎস হয়ে উঠবে ঘুমটা! মনের সমস্ত সরীসৃপ ভাবনা আরও ভয়ঙ্কর
হয়ে উঠবে ঘুমের ভেতরে! আমি স্বপ্ন দেখতে লাগলুম।
অদ্ভুত কুৎসিতে সে
স্বপ্ন। পরিষ্কার দেখলুম একটা ন্যাড়া নগ্ন পাহাড় আমার সামনে। তার কোথাও একটা
গাছপালা নেই‚ এক গুচ্ছ ঘাস পর্যন্তও
নয়। কলকাতার চিড়িয়াখানার অতিকায় কচ্ছপগুলোর মতো বড়ো বড়ো পাথরে ছেয়ে আছে তার
সর্বাঙ্গ। চারিদিকে,
জনপ্রাণীর চিহ্ন নেই। শুধু পাহাড়টার মাথার ওপর পড়ন্ত বেলার খানিক
রক্ত-রৌদ্র কারো নিষ্ঠুর ভ্রূকুটির মতো জ্বলছে। আর সেখানে সেই অশুভ রাঙা আলোয় ডানা
মুড়ে বসে আছে একটি মাত্র শকুন, যেন অপেক্ষা করে আছে
কালপুরুষের মতো। কিন্তু ওইখানেই শেষ নয়। আরো ছিল তারপর। আমি দেখলাম, সেই পড়ন্ত আলোয়, সেই ভয়ঙ্কর নগ্নতার ভেতরে শকুনের
সেইক্ষুধার্ত চোখের নীচে চারজন মানুষ একটা মৃতদেহ কাঁধে করে নিয়ে চলেছে। কোথায়
চলেছে জানি না। তাদের চারজনের চোখে-মুখেই একটা বিবর্ণ ক্লান্তি। আর আর সেই শববাহকদের
মধ্যে আমি একজন।
চীৎকার করে আমি জেগে
উঠলুম। আমার সর্বাঙ্গ দিয়ে তখন দরদর করে ঘাম পড়ছে। চলন্ত ট্রেনের শব্দ ছাপিয়ে
বেজে উঠছে আমার হৃৎপিণ্ডের আওয়াজ।
আলো জ্বেলে দিয়ে উঠে
বসলুম এবার। না‚ আর ঘুমোব না। যে কোনো
কারণেই হোক আমার মধ্যে কোথাও কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলুম‚ রাত প্রায় তিনটের কাছাকাছি। ঐ
সময়টুকু না হয় আলো জ্বেলে বসেই থাকব।
এতক্ষণে আমার মনে অনুতাপ
হতে লাগল। সাহিত্যিক ভদ্রলোককে ধরেই রাখা উচিত ছিল আমার গাড়িতে।
এই দুঃস্বপ্নের চাইতে
সাহিত্যচর্চাও নেহাৎ মন্দ ছিল না।
হেলান দিয়ে বসে বসে আবার
সংখ্যাতত্ত্ব ভাবতে শুরু করলুম। কিন্তু এতক্ষণে সত্যিই ঘুম আমাকে পেয়ে বসেছে। বসে
থাকতে থাকতে আবার আমার চোখ জড়িয়ে এল।
এবং—
এবং একটু পরেই সেই কুৎসিত
স্বপ্নটার পুনরাবৃত্তি। সেই পাহাড়‚
সেই পড়ন্ত রোদ‚ সেই শকুন। আর তেমনি একটা মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে
আমরা চারজন শবযাত্রী!
এবার চীৎকার নয়‚ আর্তনাদ করে সোজা হয়ে বসলুম
আমি। আর পাশের জানলার ভিতর দিয়ে যদি ভোরের ফিকে আভাস দেখা না যেত‚ তা হলে হয়তো চেন টেনে ট্রেন
থামিয়ে দিতুম, নয়তো ঝাঁপিয়ে পড়তুম দরজা দিয়ে।
উঠে সমস্ত জানলাগুলো খুলে
দিলুম। সূর্য ওঠেনি এখনো‚ বাইরের গাছপালা, মাঠ আর পাহাড়ের
ওপরে শুভ্র ধূসর ব্রাহ্মমুহূর্ত। একরাশ কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া এসে কাঁপুনি ধরিয়ে
দিলে শরীরে‚ আমি গ্রাহ্য করলুম না।
বিদেশী কবির ভাষায় শুধু আমার প্রাণভরে বলতে ইচ্ছে করছে:
‘Hail Holy light—’
বেলা আটটার সময় পৌঁছলুম
গন্তব্য স্টেশনে। ভুতুড়ে গাড়িটা থেকে নেমে যেন মুক্তিস্নান হ’ল।
স্টেশনে এক্কা ছিল‚ মামাই পাঠিয়েছেন। এক ঘণ্টার
মধ্যেই আট মাইল রাস্তা পার হয়ে গেলুম।
মামা ব্যাচেলার মানুষ।
একটু পাগলাটে ধরনের। প্রথম জীবনে সন্ন্যাসী হয়ে কয়েক বছর অজ্ঞাতবাস করেছিলেন, তারপর এখানে এসে
ডাক্তারী শুরু করেছেন। একেবারে পাণ্ডববর্জিত গ্রাম-অঞ্চল। কয়েক বাক্স হোমিওপ্যাথি
ওষুধের জোরেই এখানে ধন্বন্তরি হয়ে বসেছেন তিনি।
পাহাড়, শালবন, একটি ছোট নদী আর কয়েক ঘর দেহাতী মানুষের ভেতরে মামার লাল টালির ছোট্ট
বাড়িটি অত্যন্ত মনোরম। জায়গাটার কাব্যসৌন্দর্য আমি ঠিক বর্ণনা করতে পারব না। সেই
সাহিত্যিক ভদ্রলোক থাকলে তিনিই সেটা ভালভাবে করতে পারতেন। মোটের ওপর আমার ধারণা‚ কলকাতা থেকে যারা কিছুদিনের জন্য
পালিয়ে আত্মরক্ষা করতে চায় এবং সেই অজ্ঞাতবাসের সময়ে শহরের কোন পরিচিত লোকের
সঙ্গে দেখা না হলেই যারা স্বস্তি বোধ করে, এ জায়গা তাদের পক্ষে আদর্শ।
অনেকটা আগে বাড়িয়েই
মামা দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর রগের দু'পাশে দু’গোছা পাকা
চুল ঝকঝক করছিল সকালের রোদে।।
কিন্তু তার চাইতেও ঝকঝকে
হাসি হাসলেন মামা, ‘আয়-আয়! পথে কোন অসুবিধে হয়নি তো?’
‘অসুবিধে!’ আমি হাসলাম উত্তরে। সারারাত ট্রেনের সেই দুঃস্বপ্নটা আবার আমার নতুন
করে মনে পড়ে গেল।
কিন্তু একটু পরেই ঠাণ্ডা
জলে স্নান করে জ্বালা ধরা চোখ দুটো জুড়িয়ে গেল, আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে এল সব,
তখন চামচেতে মুরগীর ডিমের পোচ তুলতে তুলতে আমি মামাকে স্বপ্নটা বললুম।
শুনে মামা হো–হো করে হেসে উঠলেন।
‘আসবার আগে মাংস-টাংস
খেয়েছিলি বোধ হয়’
‘তা খেয়েছিলুম। একটু
বেশীই হয়ে গিয়েছিল।’
‘তাই এই কাণ্ড। পেট গরম হলেই লোকে
ওসব খেয়াল দেখে। রান্নার তো দেরি আছে‚
ব্রেকফাস্টটা ভালো করে সেরে নিয়ে ঘণ্টা তিনেক নিশ্চিন্তে ঘুমো। আমি ততক্ষণে গ্রাম
থেকে এক রোগী দেখাবার পাট সেরে আসি।’
ব্রেকফাস্ট চুকে যাওয়ার
পরে মামার ডাক্তারী ব্যাখ্যাটাকে হৃদয়ঙ্গম করে সমস্ত মনটা বেশ ঝরঝরে হয়ে গেল।
তারপর ক্যাম্বিসের খাটিয়ায় গা এলিয়ে দিতেই আবার ঘুমের পালা। এবার নিঃস্বপ্ন এবং
নিচ্ছিদ্র।।
ঘুম ভাঙল চাকরটার বিকট
কান্নায়।
ছুটে বেরিয়ে এলুম
বারান্দায়। মামাকে একদল মানুষ বয়ে আনছে কম্পাউণ্ডের মধ্যে। তাদের চোখে-মুখে শোক
আর বেদনার ছাপ। হাউ হাউ করে কাঁদছে চাকরটা।
‘কী হয়েছে? কী হয়েছে?’ বুকফাটা জিজ্ঞাসা ছুঁড়ে দিলুম আমি।
কিন্তু উত্তরের দরকার ছিল
না আমার মন তা আগেই টের পেয়ে গেছে। তবু কে জানত মামার হার্টের অবস্থা এত খারাপ
ছিল! মাইল চারেক দুরে পাহাড়ী রাস্তায় ওঠবার সময় ঘোড়া থেকে তিনি পড়ে যান। যারা
কাছে ছিল, তারা বললে, ঘোড়া থেকে পড়ে তিনি মারা যাননি‚ পড়বার আগেই তাঁর মৃত্যু
হয়েছিল।
পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে
রইলুম। কাঁদবার মত শক্তি আমার ছিল না।
এসে যখন পড়েছি, তখন শোকে আড়ষ্ট
হয়ে বসে থাকা আমার চলে না। আট মাইল দূরের পোস্ট অফিসে দরকারী টেলিগ্রাফ পাঠিয়ে
সব ঠিক করে, যখন মড়া নিয়ে বেরুলাম‚ তখন বেলা নেমে এসেছে।
আড়ষ্ট ক্লান্ত পায়ে
চলেছি। প্রায় মাইল দেড়েক দূরে শ্মশান।
কিন্তু একি‚ একি! এখানে সেই ন্যাড়া পাহাড়টা
এল কোত্থেকে? কোথা থেকে তার ধারালো চুড়োটার ওপরে অমন করে পড়েছে শেষ বেলার হিংস্র
আরক্তিম আলো‚ কোথা থেকে একটা শকুন এসে
সেখানে ডানা মেলে বসেছে কালপুরুষের মতো?
সব এক‚ সেই স্বপ্নের সঙ্গে সব এক। আমার
চারিদিকে সেই অবিশ্বাস্য শূন্যতার সেই প্রেতপাণ্ডুর বিস্তৃতি।
অমানুষিক ভয়ে আমি
দাঁড়িয়ে পড়লুম‚ কে যেন আমার পা দুটোকে
টানতে লাগল পাথুরে মাটির তলায়। সারারাত ট্রেনে আমাকে অমন করে ভয় দেখালে কে? আমার বার্থের
তলায় গুড়ি মেরে যে বসেছিল‚
কে সে?
সে কি মৃত্যু ? আমার সঙ্গে‚ আমারই সহচর হয়ে এসেছে সে?
ছবি: প্রকাশ গুপ্ত
আপলোড: ১২/১২/২০১৮
Bhalo
ReplyDeleteebar o khub bhalo,darun Biswas saheb.
ReplyDeleteKhub valo. Voye gaye kanta dilo.
ReplyDeleteDarun
ReplyDeleteASADHRAN
ReplyDeleteKichu bolar nei ,Asadharon
ReplyDelete