রাক্ষসদহের
রক্ত–পিশাচ
শিশির
বিশ্বাস
ভয়ঙ্কর
এই গল্পটা শুনেছিলাম পদিপিসির কাছে। না‚ খ্যাতনামা
লেখিকার বিখ্যাত গল্পের পদিপিসি নয়। এই পদিপিসি অতি সামান্য মানুষ। বাড়ি
বাড়ি কাজ করে দিন গুজরান করতেন। আমরা তখন ছোট। মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়তে মাস কয়েক আমাদের
বাড়িতেও ছিলেন। বিধবা মাঝ বয়সী মহিলাটির তখন এক অন্য
পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল। বেজায় কাজের মানুষ শুধু নয়‚ দারুণ
ভাল গল্প বলতেও পারতেন তিনি।
অথচ
মজার ব্যাপার হল‚ তাঁর সব কথা আমরা বুঝতেও পারতাম না। সম্ভবত
পূর্ব বাংলার দক্ষিণের জেলা নোয়াখালী বা চট্টগ্রামের মানুষ ছিলেন। অল্প দিন হল দেশ
ছেড়ে আসার কারণে শহর কলকাতার ভাষা তখনও তেমন রপ্ত করে উঠতে পারেননি। তবু তাঁর
গল্পের আকর্ষণ ছিল দুর্নিবার। আমরা ছোটরা তো বটেই‚ এমনকী মা পর্যন্ত
তাঁর গল্পের ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। কাজের ফাঁকেই হঠাৎ গল্প জুড়ে দিতেন। হাতের কাজ
চলছে‚ সঙ্গে গল্প। মা হাঁ করে শুনতেন। আসলে গল্প বলতে জুড়ি ছিল
না তাঁর। অভিজ্ঞতাও ছিল প্রচুর। তাঁর অনেক
গল্পই পরে মায়ের কাছে শুনেছি।
গোড়া
থেকেই বলি তবে। নদীনালার দেশ পূর্ববাংলা বরাবরই মাছের দেশ। সেই মাছ ধরাই ছিল
পদিপিসিদের জীবিকা। শুধু পুরুষ নয়‚ প্রয়োজনে
বাড়ির মেয়েদেরও লেগে পড়তে হতো সেই কাজে। বর্ষায় নদীনালা যখন জলে পূর্ণ‚ তখন সুবিধা
ছিল। গ্রামে থেকেই কাজ চলত। বাড়ির মেয়েদের তখন শুধু ঘরের কাজ। কিন্তু যখন নদী–খালের জলে
টান ধরত‚ তখন নৌকো নিয়ে বাড়ি সুদ্ধ সবাই চলে
যেত অনেক দূরে মোহনার কাছে। সেখানেই কোনও সুবিধা জনক জায়গায় অস্থায়ী ঘর। পুরুষেরা
দিনভর মাছ ধরত। মেয়েরা সেই মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করত। তারই মধ্যে কোনও এক ফাঁকে
মাঠ থেকে তোলা শাক দিয়ে ভাত আর তেঁতুলের টক। শুঁটকির উৎকট গন্ধে মাছ খাওয়ার কথা
কেউ ভাবতেও পারত না।
কথাগুলো
যত সহজে বলা গেল‚ প্রকৃত কাজ অত সহজ ছিল না অবশ্য। নদী
মোহনার নির্জন বিদেশ বিভূঁই স্থানে আস্তানা গেড়ে এভাবে দিনের পর দিন বাস করা খুব
সহজ নয়। প্রতি বছর বাঘের পেটে আর সাপের কামড়ে মারা পড়ত একাধিক মানুষ। এর উপর ছিল
ডাকাত। রোমহর্ষক সেসব কাহিনি। আর ছিল মেছো ভূত। পূর্ব বাঙলায় যাদের বলা হত ‘মাইছা দেউ’। ওরা
ছিল এক উটকো আপদ। সন্ধেয় মাছ ধরে ঝুড়ি বোঝাই হচ্ছে। হঠাৎ ঝুড়ির কাছে খচমচ আওয়াজ।
টের পেয়ে হইহই করে সবাই ছুটে যাবার আগেই ঝুড়ি সাফ। অবশ্য মাইছা দেউদের নিয়ে বেশি
ভাবনা ছিল না। ওরা বাতাসে ভেসে বেড়াত। অল্প কয়েক দিন উৎপাতের পর বাতাসে ভেসেই চলে
যেত অন্য কোথাও। অগত্যা নানা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতায় যে তাঁর গল্পের ঝুলি ভরতি থাকবে‚
তাতে আর আশ্চর্য কী!
একবার
মেয়ে–পুরুষ সবাই মাছ শুঁটকি করতে মোহনার দিকে গেছে। জালে মাছও পড়ছে অঢেল। দিনভর
শুধু কাজ আর কাজ। ছেলেরা মাছ ধরে ঝুড়ি মাথায় যথাস্থানে এনে ঢেলে দিয়েই খালাস।
মেয়েদের কাজের শেষ নেই তারপর। অত মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করা চাট্টিখানি কথা নয়।
ছোট মাছ চড়া রোদে বালি বা ঘাসের উপর ছড়িয়ে দাও। একটু বড়গুলো নানা কায়দায় ফালি দিয়ে
ঝুলিয়ে দাও দড়িতে। তারপর পাহারা। খানিক শুকিয়ে এলে উলটে দেওয়া। তারপর বস্তায় ভরে
মজুত। কবে মহাজনের নৌকো আসবে‚ সেই অপেক্ষা।
ছোট
মাছ তবু কাটতে হয় না। রোদে ছড়িয়ে দিলেই হল। কিন্তু বড় মাছের জন্য কিছু আলাদা
ব্যবস্থা দরকার। মাছের আকার–আকৃতি বুঝে
এমন ভাবে ফালি দিতে হবে যে‚ মাছ গোটাই থাকবে। কোনও অংশই আলাদা
হবে না। অথচ অল্প দিনের মধ্যেই শুঁটকি হয়ে যাবে। তাই ঝক্কি কিছু বেশিই।
সেবার
দিনভর তাই শুধু কাজ আর কাজ। এরই মধ্যে এক বিকেলে ছেলেরা পেল্লায় এক বোয়াল মাছ ধরে
নিয়ে এল। সেই মাঝ দেখে সবাই তো থ! মাছ নিয়েই
কাজ। কিন্তু অত বড় বোয়াল আগে কেউ দেখেনি। শুটকি মাছ
ধরতে খুব মজবুত জাল ব্যবহার হয় না। ছোট মাছই ধরা হয় বেশি। সেই জালে এত বড় মাছ ধরা
পড়ার কথা নয়। অবাক হয়ে গিয়েছিল ছেলেরাও। তবু ধরা যখন পড়েছে‚ কয়েকজন নৌকো
থেকে নামিয়ে ঘাড়ে করে এনে ফেলেছে মেয়েদের সামনে। কেটে এবার শুকোতে দাও। কিন্তু
মেয়েরা সেই মাছ কাটবে কী! অত বড় মাছ কাটা কী তাদের কাজ! তার উপর দিব্যি নড়ছে তখনও।
মেয়েরা
সাফ জানিয়ে দিল‚ এ মাছ তারা কাটতে পারবে না। পারলে
ছেলেরা কাটুক। নইলে অন্য ব্যবস্থা করুক।
অন্য
ব্যবস্থা মানে‚ মাইছা দেউয়ের ভোগের জন্য খানিক দূরে
মাঠের মাঝে ফেলে আসা হোক। তিনিই ব্যবস্থা করে ফেলবেন। কারণও
ছিল। অত বড় মাছ শুঁটকির জন্য হিসেব করে ফালি দেওয়া খুব সহজ নয়। শুকোতেও লেগে যায়
অনেক দিন। অথচ সেই তুলনায় দাম খুব বেশি পাওয়া যায় না। সে সময় পশুপাখির খামার কম
থাকায় তাদের খাবার তৈরির জন্য শুঁটকি মাছের চাহিদা কিছু কমই ছিল।
যাই
হোক‚ ছেলেরা
কিন্তু ফেলতে রাজি হল না। এত বড় মাছ। রীতিমতো লড়াই করে ধরা। ঘাড়ে
করে আনতেও মেহনত গেছে। অগত্যা আনা হল কুড়ুল। সেই কুড়ুল দিয়ে
একজন মাছের পেটে বড় এক পোঁচ দিয়েই আঁতকে পিছিয়ে এল খানিক। কী
ভয়ানক! মাছের পেট থেকে বেরিয়ে এসেছে বাচ্চা ছেলের মাথার খানিক অংশ।
কৌতূহলে
তারপর মাছের পেটে চাপ দিতেই বের হয়ে এলো রঙিন জামা গায়ে বছর তিনেক বয়সের এক বাচ্চা
ছেলের দেহ। বেশ ভাল অবস্থায়। দেখেই বোঝা যায়‚ অল্প আগে মাছটা
গিলেছে তাকে। মাছটা যে সহজে ধরা পড়েছে‚ তা ওই
কারণেই। পেট বোঝাই থাকায় ভারি শরীর নিয়ে জাল ছিঁড়ে পালাতে পারেনি।
এমনও
হতে পারে‚ বাচ্চাটি মারা যাবার পর নদীতে ভাসিয়ে
দেওয়া হয়েছিল। মাছটার নজরে পড়তে গিলে ফেলেছে তৎক্ষণাৎ। তবে মৃত শিশুটিকে দেখে তেমন
মনে হয়নি। পেটে জল রয়েছে কিনা‚ কেটে দেখলেই বোঝা যেত। কিন্তু রাজি
হয়নি কেউ। ফের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সেই
কোন ছেলেবেলায় শোনা। পদিপিসির এসব রোমহর্ষক গল্পের বেশিরভাগই আজ আর মনে নেই। তবে রাক্ষসদহের
রক্ত পিশাচের গল্পটা ভুলিনি আজো। অমন ভয়ঙ্কর গল্প খুব বেশি শুনিনি।
এ
গল্পের ঘটনাস্থল অবশ্য সেই প্রত্যন্ত নদী মোহনায় নয়। গ্রামের কাছেই। পদিপিসিরা
যেখানে থাকতেন‚ আশপাশে ছিল বেশ কয়েকটা বড় বিল। গ্রাম বাংলায় বিশাল আকারের প্রাকৃতিক জলাকে বিল বলা হয়। এসব জলায় মেলে নানা
জাতের মাছ। নদীর ধারে বাড়ি হলেও এই সব বিলই ছিল তাঁদের মাছ ধরার আসল জায়গা।
এর মধ্যে রাক্ষসদহ ছিল কই মাছের ঘাঁটি। রাক্ষসদহের বড় সাইজের পাকা কই মাছের বাজার
ছিল। ভাল দাম।
বহুদিনের পুরনো জলা। রাক্ষসদহের এমন অদ্ভুত নামের কারণ তাই বলতে পারে না কেউ। তবে নানা গালগল্প যে ভেসে বেড়াত‚ তা বলাই বাহুল্য। তবে
যাদের মাছ ধরাই জীবিকা‚ তারা বিশেষ গ্রাহ্য করত না কেউ। দিনে তো
বটেই‚ রাতেও
অনেকে হানা দিত। নিরিবিলি রাতেই যে মাছ ধরা পড়ে বেশি।
একটু রাতের দিকে বিলে নৌকো নিয়ে লগি পুঁতে লম্বা জাল পেতে দেওয়া হত। তারপর নৌকোয় বসে
অপেক্ষা। এক–দেড়
ঘণ্টা বাদে শুধু জাল তুলে দেখে নেওয়া। মাছ পড়লে জাল থেকে ছাড়িয়ে নৌকোর যথাস্থানে।
বেশি অন্ধকার রাত হলে সঙ্গে একটা কেরোসিনের কুপি। চাঁদনি রাত হলে তাও দরকার হয় না।
আর নৌকোয় মানুষও বেশি লাগে না। একজনই যথেষ্ট।
তা
এইভাবেই চলছিল। ভয়ানক ব্যাপারটা ঘটে গেল ওই সময়। গুজব আগে থাকতেই ছিল। এরপর রাক্ষসদহ
নিয়ে নানা ভয়ানক গল্প দেখতে দেখতে ডালপালা ছড়িয়ে ফেলল।
সে
রাতে গ্রামের কয়েকজন রাক্ষসদহে গিয়েছিল মাছ ধরতে। তাদের একজন খগেন মালাকার। সকালে
আলো ফুটতে একে একে অন্যরা নৌকো নিয়ে ফেরার পথ ধরেছে। কয়েকজন খেয়াল করল‚
খগেন তার নৌকোয় অসাড়ে ঘুমোচ্ছে। ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে এগিয়ে গিয়েছিল কয়েকজন।
তারপর কাছে নৌকো নিয়ে যা দেখল‚ তাতে সবার তো আক্কেল গুড়ুম হবার
জোগাড়। কী ভয়ানক! খগেন চিতপাত হয়ে পড়ে আছে নৌকোয়। শরীর শুকিয়ে প্রায় কাঠ হয়ে রয়েছে।
প্রাণ নেই।
খগেনের
তেমন কোনও ব্যামো ছিল না। জোয়ান শক্ত সমর্থ মানুষ। কী ভাবে তার এই দশা হল ভেবে পেল
না কেউ। খবর গেল থানায়। তারাও কিনারা করতে পারল না।
আগেই
বলেছি‚ ভয়ানক এই খবর প্রায় বিদ্যুৎ বেগে
ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। রাক্ষসদহে রক্ত পিশাচ হানা দিয়েছে। কব্জায়
পেলে মানুষের রক্ত চুষে খেয়ে ফেলে। জলজ্যান্ত
মানুষকে অল্প সময়ের মধ্যেই ছিবড়ে করে দেয়। শিকার টেরও
পায় না। খগেন মালাকার মাছ ধরতে গিয়ে তার খপ্পরে পড়েছিল। সকালে যখন তাকে নৌকোয়
পাওয়া যায়‚ শরীরে এক বিন্দু রক্ত নেই। শুকিয়ে
কাঠ হয়ে রয়েছে। জলে জাল পাতা রয়েছে তেমনই। বেচারা সন্ধে রাতে জাল পেতে নৌকোয় সেই
যে ঘুমিয়ে পড়েছিল। রক্ত পিশাচ সেই সুযোগে এসে তার শরীরের রক্ত চুষে খেয়ে গেছে।
সেকালে
গ্রাম বাংলার মানুষ খুব ভিতু ছিল না। এত বড় একটা ব্যাপার। তবু রাক্ষসদহে মাছ ধরা
একেবারে বন্ধ হয়নি। কিছু কমেছিল‚ এই মাত্র।
বিল–বাঁওড়ে
মাছ ধরে যাদের দিন চলে‚ তাদের উপায় কী আর? তার উপর রাক্ষসদহের
কই মাছ!
সেই
ঘটনার পর মাস দুয়েক আর কিছু হয়নি। ব্যাপারটা সবাই ভুলেই যেত হয়তো। তার মধ্যে আবার
সেই কাণ্ড! অন্য আর একজন। রাতে জলজ্যান্ত মানুষটা নৌকো নিয়ে রাক্ষসদহে মাছ ধরতে
বের হয়েছিল। পরের দিন ভোরে দেখা গেল খগেন মালাকারের মতই নৌকোর উপর মরে পড়ে আছে।
শরীর শুকিয়ে কাঠ। শুকনো চামড়ায় মোড়া কঙ্কাল। অথচ দেহের কোথাও
তেমন ক্ষতচিহ্ন নেই।
এমন
ঘটনা আজকের দিনে হলে তোলপাড় হয়ে যেত। কিন্তু এ অন্তত সেই সত্তর–আশি বছর আগের কথা।
গ্রামের দিকে একজন দারোগা আর দু’চারজন পেয়াদা–পুলিশ নিয়ে থানা। সামাল দিতে হয়
বিশাল এলাকা। মামুলি খুন–জখমের
কিনারা করতেই জিব বেরিয়ে যাবার জোগাড়। আর এ তো রক্তচোষা পিশাচ। সোজা কথায়
ভাম্পায়ার। খগেন মালাকারের বেলায় থানা থেকে উর্দিপরা দু’জন পুলিশ দেখা দিয়েছিলেন। কিন্তু
এবার আর ধারেকাছে মাড়ায়নি কেউ। বড়বাবু হাত উলটে সাফ জানিয়ে দিলেন‚ সদরে
রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারাই ব্যবস্থা নেবে।
তা
সদর থেকে কেউ আর আসেনি। কিন্তু জেদ চাপল বৃন্দাবনের মাথায়। বৃন্দাবন সর্দার
ডাকসাইটে গুণিন। অর্থাৎ ভূতের ওঝা। ভূত তাড়াবার জন্য দূর দূর গ্রামে ডাক পড়ে। আর
তার নিজের গ্রামের কাছেই কিনা এই ব্যাপার! ভূত তাড়াতে বৃন্দাবনের ফি কিছু বেশিই।
বোধ হয় সেই কারণেই রাক্ষসদহের ব্যাপারে তার ডাক পড়েনি। তবে যারা বিলে নিয়মিত মাছ
ধরতে যায়‚ তাদের ভিতর প্রাথমিক কিছু কথা শুরু
হয়েছে। কিভাবে চাঁদা তুলে বৃন্দাবনের খরচ তোলা যায় সেই ব্যাপারে।
কথাটা
বোধ হয় বৃন্দাবনের কানে গিয়েছিল। খেপে উঠে সাফ জানিয়ে দিল‚ ‘তোরা
ভেবেছিস কী আমাকে? হাজার
হোক আমার গাঁয়ের মানুষ তোরা। ভাবিসনি। রাক্ষসদহের রক্তচোষা পিশাচ বিদেয় করে দেব
আমি। কানা কড়িও লাগবে না।’
আগেই
বলা হয়েছে‚ বৃন্দাবন তল্লাটের ডাকসাইটে গুণিন।
মন্ত্রে বাঘে–গরুতে
এক ঘাটে জল খায়। ভূত‚ দানো পালাবার পথ পায় না। সেই
বৃন্দাবন ব্যবস্থা নেবে শুনে‚ সবার বুকে বল এলো যেন।
দিন
কয়েক পরে এক রাতে বৃন্দাবন তৈরি হয়ে হাজির হল রাক্ষসদহে। সঙ্গে বড় এক নৌকোয় গাঁয়ের
কয়েকজন। এছাড়া ভূত তাড়াবার নানা জিনিসপত্র তো রয়েছেই। তারপর রাতভর রাক্ষসদহে চলল
বৃন্দাবনের ভূত তাড়াবার নানা ক্রিয়াকলাপ। হরেক মন্ত্র।
বিশাল
বিলের চার কোনায় মন্ত্র পড়ে বাঁধন দেওয়া হল। শেষে পুব আকাশ ফর্সা হবার আগে
বৃন্দাবন শেয়ালের লেজের চামর নাচিয়ে শেষ বারের মতো পিশাচ বন্দি মন্ত্র পড়ে জানিয়ে
দিল‚ ‘এবার
ভয় নেই আর। রক্ত পিশাচের সাধ্য নেই রাক্ষসদহে পা ফেলে। দূর
হয়ে গেছে।’
বিনা খরচে বৃন্দাবনের বদান্যতায় সবাই বেজায়
খুশি। বৃন্দাবনের খাতিরে গাঁয়ে ছোটখাটো এক ভোজের আয়োজনও হয়ে গেল।
দিন
কয়েক ভালই কাটল এরপর। কিন্তু তারপরে ফের সেই ব্যাপার। রাতে
মাছ ধরতে গিয়ে রাক্ষসদহে ফের একজন রক্ত পিশাচের শিকার। সেই একই কায়দায়।
এতদিন
তবু এক রকম চলছিল। কিন্তু এরপর আর সহজ রইল না। বৃন্দাবন ডাকসাইটে গুণিন। তার
মন্ত্রে কাজ হয়নি মানে ব্যাপার সত্যিই ভয়ানক। রাক্ষসদহে
রাতে মাছ ধরতে যাওয়া একেবারে বন্ধই হয়ে গেল। তবু অন্য
খালবিল আছে। গ্রামের মৎস্যজীবী মানুষের চলে যাচ্ছিল এক রকম। কিন্তু বদনাম হয়ে গেল
বৃন্দাবনের। সেভাবে কেউ আর এখন ডাকে না তাকে। খাতিরও
কম। শুধু সেই কারণে নয়‚ বৃন্দাবন
দমে গেল গুরু ভৈরব ওঝার কথা ভেবে।
এসব
কাজে ওস্তাদ মানুষ ছিলেন ভৈরব ওঝা। তল্লাটে সবাই জানত ডজন কয়েক ভূত তাঁর ঘরে বাঁধা
হয়ে রয়েছে। গুরুর আদেশ হলেই মুহূর্তে হুকুম তামিল হয়ে যেত। সেই গুরুর কাছে তার
মন্ত্র শেখা। সেই মন্ত্র এভাবে বৃথা হওয়া মানে খোদ গুরুর অপমান! কিছু একটা ভুল
হয়েছে নিশ্চয়। বৃন্দাবন ঠিক করল‚ আর
এক দিন গিয়ে ফের পিশাচবন্ধ দিয়ে আসবে।
কিন্তু
ভাবনাটা কিভাবে কাজে লাগাবে সেটাই হল এক সমস্যা। একেই তো রাক্ষসদহের নামেই তখন
আতঙ্ক। তারপর গ্রামে তার সেই আগের খাতির নেই। অযথা
কেউ আর সঙ্গে যেতে রাজি নয়। একবার তাই ভেবেছিল‚ একাই চলে
যাবে। কিন্তু পরে ভেবে দেখল‚ সেটা সম্ভব নয়। ভূত–পিশাচ
তাড়াবার মন্ত্র‚ ক্রিয়া–কলাপ যথেষ্টই জটিল। সামান্য ভুল হলে ফল তো মিলবেই
না‚ নিজের
প্রাণটাও চলে যেতে পারে। অন্তত একজন সাগরেদ দরকার। অল্প দিন আগেও তার নিজেরই জনা
কয়েক সাগরেদ ছিল। বাড়িতে পড়ে থাকত। অবস্থার বিপাকে ভেগে পড়েছে।
শেষে
অনেক ভেবে বৃন্দাবনের মনে পড়ল মোকন বারুইয়ের কথা। মোকন সাহসী গোঁয়ার–গোবিন্দ গোছের
মানুষ। নৌকো বাইচে ওস্তাদ। চৌধুরিবাড়ির
বাইচের নৌকোয় ওর জায়গা বাঁধা। বলা যায়‚
সেই কারণে চৌধুরিবাবু উপরমহলে বলে গ্রামের চৌকিদারের কাজ গছিয়ে দিয়েছেন। সেই থেকে
মোকন বারুই গ্রামের চৌকিদার। কাজ বলতে মাঝেমধ্যে মাইল কয়েক দূরের থানায় হাজিরা
দিয়ে গ্রামের খুন–জখম
বা চুরি–ডাকাতির
খবর পৌঁছে দিয়ে আসা। কোনও নোটিস থাকলে গ্রামে এসে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে জানিয়ে দেওয়া।
এছাড়া বছরে বার কয়েক ইউনিয়ন বোর্ডের অফিসে হাজিরা। তিন মাস অন্তর বকেয়া মাইনে ওখান
থেকেই মেলে।
বৃন্দাবন
এরপর একদিন সেই মোকন বারুইয়ের কাছেই হাজির হল। সাত সকালে মোকন তখন হাতের ডানায়
পেতলের পদক এঁটে মাথায় পাগড়ি বাঁধছে। গাঁয়ের এক চুরির কেসের রিপোর্ট দিতে থানায়
যেতে হবে। দূর তো কম নয়। যাওয়া–আসা প্রায় মাইল দশেক পথ। এক বেলার ধাক্কা। হঠাৎ এই সকালে
বৃন্দাবনকে দেখে ভুরু কুঁচকে তাকাতে সে বলল‚ ‘ভাল কাজ
জুটিয়েছিস বাপু। থানায় একটা খপর পৌঁছে দিয়েই খালাস। বলি তারপর?’
‘কেন? গাঁয়ের
চৌকিদারের ওই তো কাজ। সেই বাবদ তিন মাসে তিরিশ টাকা মাইনে।’
‘আহা‚ সে তো ঠিকই।’ বৃন্দাবন
তাড়াতাড়ি বলল‚ ‘কিন্তু তার বাইরেও তো কিছু থাকতে
আছে। এই যে আমি‚ মনের তাগিদেই তো রাতে রাক্ষসদহে
গেছিলাম। কানা কড়িও নেইনি। তবু শুধু
নিন্দেই হয়েছে। কেউ খোঁজও নেয়নি গোলমালটা কী কারণে।’
‘গোলমাল! তার
মানে?’ মোকন
বারুই ভুরু কোঁচকাল।
‘সেই কথাই তো
বলতে এলাম। হাজার হোক তুই গাঁয়ের চৌকিদার। কেউ গা না করলেও তোর তেমন সাজে না।’ বৃন্দাবন
অতঃপর একে একে বুঝিয়ে দিল ব্যাপারটা। সেদিন রাতে তার ক্রিয়াকর্মে কিছু ভুল হয়ে
গেছে। তাই রাক্ষসদহের রক্ত পিশাচ আবার ফিরে আসতে পেরেছে। এবার সেই ভুল সে শুধরে
দিয়ে আসতে চায়। কিন্তু কেউ তার সঙ্গে যেতে চাইছে না। এই অবস্থায় গাঁয়ের মানুষের
মুখ চেয়ে মোকনই ভরসা। সে রাজি থাকলে বৃন্দাবন আজ রাতেই ফের একবার রাক্ষসদহে যেতে
পারে।
মোকন
বরাবরই কিছু গোঁয়ার গোছের মানুষ। বুকের পাটাও আছে। তবু বৃন্দাবন এতটা আশা করেনি।
বৃন্দাবন প্রস্তাব করতেই সে তাল ঠুকে বলল‚ ‘তাহলে আজকেই
চলো বেন্দাবনদা। থানায় রিপোট করতে কালকেই যাব না হয়। সেই সঙ্গে জাল ফেলে কিছু মাছও
ধরে আনতে পারব। কদিন ধরে সমানে বাড়ির কুমড়োর ঘ্যাঁট।
অরুচি ধরে গেছে।’
আগেরবার
বৃন্দাবন রাক্ষসদহে গিয়েছিল প্রায় ঢাকঢোল পিটিয়ে। গ্রামের কারও জানতে বাকি ছিল না।
এবার তার ছিটেফোঁটাও হল না। বৃন্দাবন অবশ্য কয়েকজনকে জানিয়েছিল‚ আজ রাতে সে
ফের রক্ত পিশাচ তাড়াতে রাক্ষসদহে যাচ্ছে। তেমন গা করেনি কেউ।
রাতে
যথাসময়েই রাক্ষসদহে হাজির হয়েছিল দু’জন। সারা বিল চরকিবাজির মতো ঘুরে
ঘুরে বৃন্দাবনের কাজ শেষ হতে লাগল অনেকটা সময়। প্রায় মাঝ রাত। মোকন বারুই অবশ্য
গোড়াতেই বিলের এক পছন্দমতো জায়গায় তার জাল পেতে দিয়েছিল। বৃন্দাবনের
কাজ মিটতে সেই জাল দেখতে এসে তো বেজায় খুশি। বেশ ভাল রকম মাছ পড়েছে। দেরি হওয়ায়
জাল ছিঁড়ে পালিয়েও গেছে কিছু। একটা একটা করে মাছ নৌকোয় তুলে মোকন বলল‚ ‘বেন্দাবনদা‚ রাতে কেউ আর
বিলে আসে না। মাছের ঝাঁক তাই প্রায় বেপরোয়া হয়ে আছে। একবারে কত মাছ ধরা পড়েছে
দেখেছ? বলতো
আর এক খেপ দেখি। হাতে সময় যখন আছে।’
মোকন
বারুই ভুল বলেনি। রাত ভোর হতে তখনও অনেক বাকি। কৃষ্ণপক্ষ হলেও পুব আকাশে এক ফালি
চাঁদ রয়েছে। চারপাশ মোটামুটি পরিষ্কার। বৃন্দাবন
তেমন আপত্তি করল না। শুধু বলল‚ ‘সেই সন্ধে থেকে খাটা-খাটুনি কম
যায়নি। আমি তাহলে একটু গড়িয়ে নিচ্ছি। কাজ শেষ হলে
ডেকে দিস। রওনা হয়ে পড়ব।’
‘তোমার ওঠার
আর দরকার নেই বেন্দাবনদা।’
উত্তরে মোকন বারুই ঘাড় নাড়ল। ‘বড় জোর তো আর ঘণ্টা খানেক। জাল তুলে
আমি একাই দাঁড় টেনে নিয়ে যেতে পারব।’
বৃন্দাবন
কিছু আর বলল না। বেজায় ঘুমও পাচ্ছিল তার। চৈত্রের রাতে বিলে তখন ফুরফুরে বাতাস।
মাথার গামছা নৌকোর পাটাতনের উপর বিছিয়ে শুয়ে পড়ল সে। একটু পরেই নাক ডাকতে শুরু
করল।
মোকন
বারুই গোড়ায় জেগেই থাকবে ভেবেছিল। কিন্তু ঘুম জিনিসটা বেজায় ছোঁয়াচে। একে এই গভীর
রাত। সামনে কেউ অসাড়ে ঘুমোচ্ছে দেখলে অন্যের পক্ষে জেগে থাকা সহজ নয়। অগত্যা একটু
পরে মোকনের চোখও ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে উঠল। সবে জাল পাতা হয়েছে। ঘণ্টাখানেকের আগে
তোলার উপায় নেই। অনেকটা সময়। চৈত্রের রাতে বিলের ফুরফুরে বাতাসে বসে ঢুলতে ঢুলতে
কখন যে ছোট নৌকোর অন্য প্রান্তে পাশ ফিরে শুয়ে পড়েছে টেরও পায়নি। নিশুতি রাতে
রাক্ষসদহ তখন নিস্তব্ধ। থমথম করছে। একটা পাখপাখালির শব্দও নেই। নৌকোর পাটাতনের
তলায় খালুইয়ের ভিতর শুধু সদ্য ধরা কইমাছগুলোর খলবল আওয়াজ।
মোকন
কতক্ষণ ওইভাবে ঘুমিয়েছিল‚ খেয়াল নেই। হঠাৎই কানের কাছে ফিসফিস আওয়াজ শুনতে
পেল। ভাঙা গলায় খুব আস্তে কথা বলছে কেউ: কী রে মোকন‚ আমাকে বেঁধে
রেখেছিস কেন? উঠতেই
পারছি না। খুলে দে ভাই। খুলে দে শিগগির।’
মোকন
বারুই সাহসী মানুষ। তবু ভাঙা গলায় সেই ফ্যাসফেসে আওয়াজে ঘুমের ঘোরেই চমকে উঠল। আর
তারপরেই মনে হল‚ বিকৃত গলার আওয়াজটা আর কারও নয়‚ খোদ গুণিন
বৃন্দাবনের। অতি ক্ষীণ কণ্ঠে বৃন্দাবন কথা বলছে। তাকে উদ্দেশ্য করেই।
আধো
ঘুমের ভিতর মগজে ব্যাপারটা থিতু হতে যেটুকু সময়। তারপরেই গা ঝাড়া দিয়ে প্রায়
লাফিয়ে উঠল সে। ম্লান চাঁদের আলো দেখল বৃন্দাবন
যথাস্থানেই শুয়ে আছে। ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে ভুল বকছে সমানে। ডেকে তুলতে যাবে‚ হঠাৎ প্রায়
আঁতকে উঠল। এ কী চেহারা হয়েছে বৃন্দাবনের! শুকনো
চামড়ায় মোড়া প্রায় একটা নরকঙ্কাল যেন। প্রাণ আছে বলে মনে হচ্ছে না। অথচ মৃদু হলেও
ঠোঁট নড়ছে!
সাহসী
মানুষ মোকন বারুই জীবনে এত ভয় কখনও পায়নি। প্রায় হতবুদ্ধির মতো বসে আছে। আতঙ্কে
সারা শরীর প্রায় কাঠ। হঠাৎ নজরে পড়ল বৃন্দাবনের পেটের উপর নাভির কাছে প্রায় ধামার
মতো উঁচু কী একটা বস্তু। ভুরু কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে আছে‚
হালকা চাঁদের আলোয় কেমন চকচক করে উঠল সেটা। নড়ছে।
আতঙ্কে
হিম হয়ে যাওয়া শরীরটা নিমেষে সচল হয়ে উঠল মোকনের। মুহূর্তে প্রায় লাফিয়ে উঠল ও।
গ্রামের মানুষ। ততক্ষণে যা বুঝবার বুঝে ফেলেছে। বিশাল এক জোঁক। রাতের অন্ধকারে
নিঃশব্দে জল থেকে উঠে বৃন্দাবনের নাভির ভিতর মুখ ঢুকিয়ে নিঃশব্দে রক্ত চুষে
খাচ্ছে। রাক্ষসদহের আসল রক্ত পিশাচ!
পাটাতনের
নীচে দা রাখা ছিল। সেটা বের করতে যেটুকু সময়। তারপরেই প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ল মোকন। ধারাল
দায়ের এক পোঁচে প্রাণীটাকে দুই টুকরো করে
ফেলল। মুহূর্তে গলগল করে রক্তের ঢল নামল যেন। দেখতে
দেখতে নৌকো রক্তে প্রায় একাকার। প্রাণীটার দ্বিখণ্ডিত দুটো টুকরো তারপরেও টেনে ফেলতে
বেশ বেগ পেতে হল। বিশেষ করে মুখের অংশ। শুঁড়ের মতো
ফানেল ধরণের মুখটা ঢুকে গিয়েছিল বৃন্দাবনের নাভির গভীরে। আর কিছু দেরি হলেই মানুষটার
দেহের শেষ বিন্দু রক্ত গলাধঃকরণ করে ফের নিঃশব্দে নেমে পড়ত জলের গভীরে। কোনও
চিহ্নই থাকত না।
মোকন
বারুই চেষ্টার ত্রুটি করেনি এরপর। দ্রুত নৌকো বেয়ে হাজির হয়েছিল গ্রামে। কিন্তু
বৃন্দাবনকে বাঁচানো যায়নি। শরীরে সামান্য রক্তই আর অবশিষ্ট ছিল তার। প্রত্যন্ত
গ্রামে তেমন চিকিৎসা কোথায়?
তবে রাক্ষসদহে রক্ত পিশাচের উপদ্রব এরপর আর হয়নি। ভূতের ওঝা বৃন্দাবন শেষ
পর্যন্ত রাক্ষসদহের রক্ত পিশাচ বিদেয় করতে পেরেছিল। নিজের প্রাণের বিনিময়ে।
বড়
জাতের কিছু জোঁকের নৌকোয় উঠে মানুষের রক্ত চুষে খাওয়ার কথা শোনা যায়।
কিন্তু এত বড় জোঁক তেমন দেখা যায় না। অন্য দিনের
মতো জোঁকটা মানুষের রক্তের গন্ধে শুঁড় বাড়িয়ে দিয়ে নিঃশব্দে উঠে পড়েছিল নৌকোর উপর।
বৃন্দাবনের নাভিতে মুখ ঢুকিয়ে দিয়ে যখন রক্ত চুষতে শুরু করে ঘুমন্ত মানুষটা
কিছুমাত্র টের পায়নি। কিন্তু পরে ঘুম ভেঙে যখন জেগে ওঠে দানব জোঁক তখন তার শরীরের
বেশিরভাগ রক্তই টেনে নিয়েছে। বৃন্দাবন চেষ্টা করেও হাত–পা নাড়াতে
পারেনি। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে মানুষটার দেহে শক্তি যেমন লোপ পেয়েছে‚
মাথাও তেমন কাজ করছিল না। বেচারার মনে হয়েছিল সঙ্গী মোকন তাকে বেঁধে রেখেছে। জোরে
কথা বলার মতো শক্তি নেই। বিড়বিড় করে সমানে সেই কথাই বলে যাচ্ছিল।
ভাগ্যিস‚ মোকন বারুই
ঘুমের মধ্যেও শুনতে পেয়েছিল!
ছবি:
স্বপন চন্দ (সৌজন্য: আমপাতা জামপাতা)
আপলোড: ১৩/৩/২০১৯
ভালো লাগলো।
ReplyDeleteসুন্দর গল্পটা, বাচ্চাদের শোনানোর মতো।
ReplyDeleteDarun
ReplyDeleteDarun
ReplyDeleteবেশ বৈঠকী মেজাজের গল্প।
ReplyDeleteawesome story
ReplyDeleteদুর্দান্ত
ReplyDeleteদারুণ
ReplyDeleteখুব ভালো লাগল
ReplyDeleteDurdanto..
ReplyDeleteঅ সা ধা র লাগল গল্পটি
ReplyDeleteDarun, khub bhalo laglo
ReplyDelete