Tuesday 5 January 2021

হাসির গল্প (মোবাইল ভাঃ): কালীগঞ্জের প্যাকাটি (শিশির বিশ্বাস)

 


কালীগঞ্জের প্যাঁকাটি

শিশির বিশ্বাস

ল্যাপটপ খুলে কাজ করছিলেন দিবাকর রায় রাত হয়েছে বেশ ছোট মফস্বল শহর কালীগঞ্জ প্রায় নিঝুম কালীগঞ্জের এই বাড়িটা অবশ্য বন্ধু রাজীবের চাকরি নিয়ে বছর কয়েক হল আছে এখানে দিবাকরের মতোই এখনও বিয়ে-থা করেনি তবে গোছানো মানুষ সস্তায় পেয়ে অল্পদিন হল কিনে ফেলেছে ছোট একতলা বাড়িটা একাই থাকে অফিসের কাজে দিন কয়েকের জন্য টুরে বেরিয়েছে বাড়িটা খালিই পড়ে ছিল খবরটা পেয়ে দিবাকর সময় নষ্ট করেননি কলকাতায় এক স্কুলে পড়ান সম্প্রতি পি.এইচ.ডি করছেন থিসিস লেখার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে দরকার ছিল দিন কয়েকের জন্য একটু নিরিবিলি ব্যবস্থা তাই চলে এসেছেন এখানে যাবতীয় দরকারি নোটস্ ভরে নিয়েছেন ল্যাপটপে এছাড়া প্রয়োজনে ডেটা কার্ড ওয়েবসাইট তো রয়েছেই জায়গাটাও মন্দ নয় ছোট শহর হলেও কলকাতা থেকে তেমন দূরে নয় সব সুবিধেই রয়েছে অথচ বেশ নিরিবিলি সমস্যা একটাই ভয়ানক সমস্যা কালীগঞ্জে পা দিয়েই সেটা হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছেন চারপাশে পানা পুকুর খোলা নর্দমা ফল স্বরূপ অসম্ভব মশার উপদ্রব দিনের বেলা তবু এক রকম সন্ধে নামলে আর রেহাই নেই রাজীব অবশ্য আগেই এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিল দিনকালও ভাল নয় দিবাকর তাই সন্ধে হলেই মশারি খাটিয়ে ল্যাপটপ আর খাতাপত্র নিয়ে বিছানায় এভাবে কাজ করতে অসুবিধা হয় খুবই কিন্তু উপায় নেই দিন দুয়েকের কাজ আর বাকি তারপরেই পাততাড়ি গোটাবেন শেষ মুহূর্তে তাই বুঁদ হয়ে কাজ করছিলেন হঠাৎ দেওয়াল ঘড়িতে টুং-টাং শব্দে সুরেলা আওয়াজ শুরু হল রাত একটা

ঘড়ির আওয়াজ তখনও শেষ হয়নি হঠাৎ চটাত করে হালকা একটা শব্দ খুব কাছেই মুহূর্তে ভুরু কুঁচকে উঠল দিবাকরের খেয়াল হল, ঠিক এক ঘণ্টা আগে বারোটা বাজার সময়েও আওয়াজটা পেয়েছিলেন তখন তেমন গ্রাহ্য করেননি কিন্তু এবার আর তা সম্ভব নয় কলকাতার নামি স্কুলের শিক্ষক ছাত্র এবং সহকর্মী উভয় মহলেই সুনাম রয়েছে তবে নিজে ছাত্র জীবনে একেবারেই অন্য প্রকৃতির ছিলেন ভয়ানক ডানপিটে স্কুলে ভাল ছেলে বলে সুনাম ছিল কিন্তু দুষ্টুমিতেও ছিলেন সেরা এজন্য শাস্তিও কম পেতে হয়নি

দিবাকর মশারির ভিতর থেকে সন্তর্পণে চারপাশে চোখ ঘোরালেন সন্দেহজনক কিছু কিছু নজরে পড়ল না একা মানুষ রাজীব ঘরে তেমন কিছুই নেই বড়সড় ঘরটা প্রায় ফাঁকাই বলা চলে ঘড়ির আওয়াজ থেমে গেছে ইতিমধ্যে চারপাশ ফের নিস্তব্ধ পিন পড়লেও শোনা যায় একবার ভাবলেন শোনার ভুল বুঝি কিন্তু নড়েচড়ে উঠলেন তারপরেই রীতিমতো ঝাঁজালো গলায় হাঁকলেন, ‘খাটের তলায় কে রে?’

আওয়াজ উঁচু পর্দায় না হলেও ঝাঁজ ছিল যথেষ্ট কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ দিবাকর ফের হাঁক দেবেন কিনা ভাবছেন, হঠাৎ খাটের তলা থেকে চিঁ-চিঁ আওয়াজ, ‘এজ্ঞে আমি প্যাঁকাটি তিন বেজায় মশা

সন্দেহ হলেও দিবাকর এতটা আশা করেননি ততক্ষণে মশারির ভিতর থেকে বাইরে বের হয়ে এসেছেন সামান্য হকচকিয়ে গেলেও সামলে নিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন, ‘প্যাঁকাটি তিন! তার মানে?’

বললাম তো প্যাঁকাটি তিন অধমের নামরীতিমতো অসহিষ্ণু গলায় জবাব এল খাটের তলা থেকে তারপর মুহূর্তে গুঁড়ি মেরে বের হয়ে এল রোগা লিকলিকে চেহারার একটা মানুষ পরনে মিশকালো ঝুলো হাফপ্যান্ট গায়ে ওই রঙের ঢলঢলে গেঞ্জি

দিবাকর তাকিয়ে ছিলেন হাঁ করে লোকটার খাঁড়ার মতো নাকের দু'পাশে কুতকুতে চোখ দুটো ঝিলিক দিয়ে উঠলএজ্ঞে প্যাঁকাটির মতো চেহারা কিনা, তাই ওই নামেই ডাকে সবাই আর তিন হল নম্বর দলে ওই নামে আরও জনাকয়েক রয়েছে যে কঙ্কাল নামও আছে কয়েকজনের হেঁহেঁএকরাশ দাঁত বের করে হাসল লোকটা

তাহলে চুরির মতলবে ঢুকেছিলি ঘরে!’

হেঁহেঁ সে আর বলতেফের দাঁত বের করে হাসি

তা, খাটের তলায় কতক্ষণ ছিলি বল দেখি? বুঝতেই পারিনি!’

হেঁহেঁ, প্যাঁকাটি তিন খাটের তলায়, আলমারির পিছনে ঘাপটি মেরে থাকবে আর গেরস্ত বুঝে ফেলবে, তাই হয় নাকি! গুরুর টেরেনিং কি মিছে? শুধু ওই বজ্জাত মশা মাটি করল

কথা শেষ না করেই লোকটা প্রায় খেপে গিয়ে নাকের উপর ল্যান্ড করা এক মশার উপর বিরাশি সিক্কার এক থাপ্পড় কশিয়ে দিয়েওফ্‌’ করে ককিয়ে উঠল দেখে ফিক করে হেসে ফেললেন দিবাকর রায় বললেন, ‘তা, এত গুণ তোর, আর সামান্য খোঁজ-খবরটুকু না করেই হানা দিলি এখানে! ঝাড়া হাত-পা মানুষ আমি, বাড়ির মালিক রাজীবও তাই ঘরে আছেটা কী যে চুরি করবি?’

কেন? আপনার ওই লেপ-তোশক! ওটা বাগাবার জন্যই তো এত মেহনতবলতে গিয়ে চোখ দুটো ফের ঝিলিক দিয়ে উঠল প্যাঁকাটির

বলিস কী! স্রেফ লেপ তোশক চুরির জন্য এই মশার ভিতর খাটের তলায় পড়ে রয়েছিস!’ দিবাকর প্রায় আকাশ থেকে পড়লেন

অ্যাঁ! তাই বলেছি বুঝি!’ জিব কেটে নাক কান মলল লোকটাভুল হয়ে গেছে ছার মুখ্যু মানুষ কিনা এজ্ঞে লেপ তোশক নয় আপনার ওই লেপটেপ

শুনে মাথাটা বোঁ করে ঘুরে উঠল দিবাকরের এবার আর ভুল হয়নি বুঝতে কী সর্বনাশ! হতভাগার টার্গেট তাহলে ওর ল্যাপটপ! যথেষ্ট দামিই শুধু নয়, এতদিনের যাবতীয় পরিশ্রমের ফসল ভরা আছে ওর ভিতর চুরি গেলে সব কিছু শুরু করতে হত নতুন করে যথাসময়ে থিসিস জমা দেওয়াও সম্ভব হত না মাত্র দিন সাতেক হল এসেছে এর মধ্যে ফিল্ড ওয়ার্কটা ভালই সেরে ফেলেছে! কিন্তু লোকটা কখন যে ঘরে ঢুকল, অনেক ভেবেও সুরাহা করতে পারলেন না বিকেলে রাতের খাবার কিনতে বাজারের দিকে গিয়েছিলেন তারপর সারা সময় ঘরেই রয়েছেন একটু ঢোঁক গিলে বললেন, ‘তা বাপু, কী করে ঘরে ঢুকলি বল দেখি?’

বললাম না, সব গুরুর কৃপা অনেক মেহনত করে শিখতে হয়েছে তারপরেই না দলে জায়গা রাতে খাওয়ার পরে একটু বাইরে বের হয়েছিলেন, মনে নেই? কাজ সেরে ফেলেছি সেই ফাঁকেফের খিঁক করে হাসল লোকটা

রাতের খাওয়াটা দিবাকর আজ একটু তাড়াতাড়িই সেরে ফেলেছিলেন চৌরাস্তার মোড়ে ফার্স্ট ফুডের দোকান আছে সন্ধেয় কিছু একটা নিয়ে আসেন সেখান থেকে আজও গিয়েছিলেন পাশেই রসময়ের মিষ্টির দোকান রাজীবের কাছেই শোনা, এদের ল্যাংচা আর পান্তুয়ার নাকি নামডাক খুব মিষ্টিটা ওর পছন্দের তালিকায় পয়লা নম্বরে হলেও কাজের চাপে আর খাওয়া হয়ে ওঠেনি বড়জোর দিন দুয়েক আর থাকতে হবে হয়তো তাই রাতের খাবারের সঙ্গে এক হাঁড়ি মিষ্টিও কিনে ফেলেছিলেন একটু বেশি করেই রাতের খাওয়া তাই একটু তাড়াতাড়িই সেরে নিয়েছেন তাও সেই নটা নাগাদ মুখ-হাত ধুয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন মিনিট কয়েক হতভাগা সেই সময়েই ঢুকেছে ভিতরে তার পাশ দিয়েই অথচ টেরটিও পাননি চোখ কপালে তুলে বললেন, ‘সে তো অনেকক্ষণ রে!’

এ আর এমন কী ছার! গুরুর তালিমে ওসব অভ্যেস আছে প্যাঁকাটির শুধু একটাই সমস্যা, শরীরের বারো আনা রক্ত হতচ্ছাড়া মশার পেটেই চলে যায় ওই জন্যই তো গায়ে গত্তি লাগল না আপনাদের আর কী সন্ধে হতেই দিব্যি মশারির ভিতর ঢুকে পড়েছেন!’

লোকটার কথার ধরণে দিবাকর হেসে ফেলে বললেনতা রাতের খাওয়া হয়েছে তোর?’

শুনে খিঁক করে হাসল প্যাঁকাটিখাওয়াদাওয়া করে কেউ চুরি করতে বের হয় নাকি? আপনি দেখছি কিচ্ছু জানেন না লেখাপড়াই শিখেছেন শুধু

কেন রে?’

গুরুর বারণচোখ নাচাল প্যাঁকাটি আমাদের হেবো গুরুর মানা শোনেনি সেবার ব্যস, গেরস্তের ঘরে ঢোকাই সার হল ভরপেটে খাটের তলায় ঘুমিয়ে পড়েছিল বেঘোরে শেষে নাক ডাকা শুরু হতেই হাতেনাতে পাকড়াও খেপে গিয়ে গুরু দল থেকেই দুর করে দিলে তাকেবলতে-বলতে আস্তিনে চোখ মুছল লোকটা বোধহয় হেবোর দুর্গতির কথা ভেবেই

তা, আজ তুইও তো ধরা পড়ে গেলি

সে তো ওই মশার জন্য আর আপনিও যে এত রাত পর্যন্ত মশারির তলায় লেপ-তোশক, থুড়ি লেপটেপ নিয়ে পড়ে থাকেন তা জানব কেমন করে!’

এঃ! শেষে মশার কাছে কাত হয়ে গেলি!’ দিবাকর জিব দিয়ে চুক-চুক শব্দ করলেন

তা, কতক্ষণ আর কামড় সহ্য করা যায় বলুন দেখি!’ প্যাঁকাটি খিঁচিয়ে উঠল এবার, ‘হতচ্ছাড়াগুলো সারা শরীরে প্রায় চাষ করে ফেলেছে আর আপনাকেও বলিহারি, জেগেই যখন রয়েছেন, মশারির তলায় না ঢুকে মশার ধূপও তো জ্বালাতে পারতেন! ওফ্প্রায় এক লিটার রক্ত মেরে দিয়ে গেছে!’

শুধু এক লিটার রক্ত!’ সামান্য নড়ে বসে দিবাকর চোখ নাচালেনআর কিছু নয়?’

কী?’ দিবাকরের কথার ধরনে হঠাৎ যেন থতমত খেল প্যাঁকাটি তারপর একগাল হেসে বলল, ‘ও ম্যালেরিয়া! এজ্ঞে ওসব ছেলেবেলায় হত একসময় এখন আর সুবিধা করতে পারে না

আরে সে ম্যালেরিয়া নয় রে খবরের কাগজ উলটে দেখেছিস কোনও দিন? নাকি ওসবে লবডঙ্কা!’

দিবাকরের কথায় যেন আঁতে ঘা লাগল প্যাঁকাটির মুখ ঝামটে বলল, ‘কেন, রাতে সিঁধ কাটি বলে কি ফেলনা? তবে কাগজ পড়ার সময় কোথায় ছার? রাতভর খাটাখাটির পর ঘুম ভাঙতে সেই বিকেল তখন কে পড়ে ওসব?’

খুব খারাপ খুব খারাপমাস্টারি কায়দায় দিবাকর মাথা নাড়লেনতোদের গুরুর এদিকেও একটু নজর দেওয়া উচিত ছিল রে!’

-কেন বলুন দেখি?’ ফের থতমত খেল প্যাঁকাটি

কেন বলুন দেখি!’ দিবাকর প্রায় ভেংচে উঠলেনরোজকার কাগজে একটু নজর দিলেই বুঝতে পারতি আরে বাপু, এখন সেই মামুলি ম্যালেরিয়ার দিন আর নেই পালটে গেছে বেমালুম কুইনিন তো ছার, আরও ভারি-ভারি ওষুধেও হচ্ছে না কিছু

বলেন কী!’ প্রায় আকাশ থেকে পড়ল প্যাঁকাটি

হ্যাঁ রে আর কী ওজনদার নাম তাদের! ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া, হেমারেজিক ডেঙ্গি, এনকেফেলাইটিস, চিকুন…’

অ্যাঁ! এসব কী?’ দিবাকরের কথার মাঝেই চোখ কপালে তুলে প্যাঁকাটি হাঁ-হাঁ করে উঠল

এসব মশার আমদানি করা রোগ ধরলে আর রেহাই নেই পড়তে যখন পারিস নিজের চেখেই দ্যাখ তাহলেবলতে-বলতে ওয়েবসাইট থেকে দিবাকর সেদিনের এক বাংলা কাগজের প্রথম পাতা ল্যাপটপে খুলে ফেললেন

আগ্রহে ঝুঁকে পড়লেও খানিক চোখ বুলিয়ে প্যাঁকাটি গম্ভীর হয়ে বলল, চশমাটা সঙ্গে নেই পড়েই শোনান বরং

পড়ে আর কী শোনাব সকালেই দেখা হয়ে গেছে আমার দিবাকর রায় হাসলেন, ‘গতকাল কলকাতায় তিন তিনজন মারা গেছে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ায় জনা কয়েক হাসপাতালে চিকুনগুনিয়ায় মারা গেছে আরও চারজন এনকেফেলাইটিসে…’

বাপরে!’ প্রায় আঁতকে উঠল প্যাঁকাটি শুনিনি তো!'

দিনভর পড়ে ঘুমলে কী আর এসব শোনা যায় রে! এ তো শুধু কলকাতার কথা কলকাতার বাইরে অবস্থা আরও ভয়ানক দাঁড়া, আর একটা কাগজ খুলছি কী লিখেছে দ্যাখ

দিবাকর আর একটা ওয়েবসাইট খুলতে যাচ্ছিলেন প্যাঁকটি ব্যাজার মুখে বলল, ‘রাতটাই মাটি করে দিলেন ছার মনে হচ্ছে জাত ব্যবসাটা ছেড়েই দিতে হবে এবার

ছেড়ে দিবি!’ দিবাকর চোখ নাচালেন, ‘এটা মন্দ বলিসনি

আপনার মতলবটা কী বলুন দেখি?’ প্যাঁকাটির চোখ দুটো হঠাৎ  সন্দেহে দুলে উঠলসেই থেকে খেলিয়ে যাচ্ছেন শুধু!’

মতলব আর কী?' নির্লিপ্তি গলায় দিবাকর বললেন, ‘রাত দুপুরে গেরস্তের ঘরে চুরি করতে ঢুকে ধরা পড়েছিস কিছু তো করতেই হবে

, এই মতলব!’ আরামে একটা নিশ্বাস পড়ল প্যাঁকাটির, ‘তা ডাকুন পুলিশ যা দিনকাল, জেল-হাজতে কদিন থাকতে পেলে বিশ্রাম হয় একটু

উঁহু, সেটি হচ্ছে না বাপু মুচকি হেসে দিবাকর মৃদু মাথা নাড়লেন

তাহলে?' কুতকুতে চোখ দুটো ফের কুঁচকে উঠল প্যাঁকাটির

হাজার হোক রাত দুপুরের কুটুম তুই শুধু হাতে ফিরে যাবি, তাই কি হয়? টেবিলে ঢাকা দেওয়া হাঁড়িতে গোটা কয়েক মিষ্টি আছে একটু মিষ্টিমুখ করে যা বরং রাতও তো কম হয়নি

অ্যাঁ!’ এই এতক্ষণে প্যাঁকাটির ঠোট ঝুলে পড়ল

হ্যাঁ রে স্কুলের মাস্টার আমি ছেলেদের গায়ে হাত তুলিনি কখনও তোর বেলাতেই বা অন্য রকম হবে কেন?’

পাশেই টেবিলের উপর মিষ্টির হাঁড়ি সেদিকে সামান্য ঘাড় ফিরিয়ে চোখ দুটো হঠাৎ জুলজুল করে উঠল প্যাঁকাটির এ যেঅ্যাটম বোম গো কত্তা!’

ব্যাপারটা জানা ছিল দিবাকরের বন্ধু রাজীবের কাছেই শোনা ছোট হলেও কালীগঞ্জ অনেক দিনের পুরনো শহর সেই যুদ্ধের সময় জাপানি বোমার ভয়ে কলকাতার অনেকে এসে ভিড় করেছে কালীগঞ্জে তারপর তো খোদ জাপানেই বোমা পড়ল রসময় ময়রা তখন বেঁচে মাথা খাটিয়ে সরেস ছানা আর ক্ষীর দিয়ে তৈরি খাটি গাওয়া ঘিয়ে ভাজা এক পোয়া ওজনের বিশাল আকারের পান্তুয়া গড়ে নাম দিয়েছিলেনঅ্যাটম বোম সাইজ আর সেই আগের মতো নেই বটে, তবু ওই নামেই এখনও বিখ্যাত হয়ে রয়েছে মুচকি হেসে মাথা নেড়ে বললেন, তাহলে আর দেরি করিসনে বাপু

প্যাঁকাটিও দেরি করল না এরপর মুহূর্তে প্রায় হামলে পড়ল হাঁড়ির উপর খেতে খেতেই বলল, ‘রাতের কুটুমের খাতিরে ব্যবস্থাটা ভালই করলেন কত্তা কিন্তু মুশকিলেও ফেলে দিলেন একটু

কেন রে?’

গুরুর বারণ গো কিন্তু রসময়ের অ্যাটম বোম বলে কথা! মাথা ঠিক রাখা যায়! আপনিই বলুন?

গুরুর কথা রাখমোলায়েম গলায় দিবাকর বললেন, ‘বরং এই অধমের কথাটা পারলে মনে রাখিস একটু নইলে স্রেফ মশার হাতেই মারা পড়বি একদিন ছারই বল আর কত্তা, কেউ বাঁচাতে পারবে না

আপনি তো বলেই খালাস কত্তা জাত ব্যবসা ছাড়া কী সহজ কাজ!’ মিষ্টির হাঁড়ি শেষ করে হাত চাটতে-চাটতে ব্যাজার হয়ে বলল প্যাঁকটি তারপর হাঁড়ি নামিয়ে ঝুপ করে দিবাকরের পায়ে একটা প্রণাম ঠুকেই দরজা খুলে ঝাঁ করে বের হয়ে গেল নিমেষে মিলিয়ে গেল অন্ধকারে

দরজা বন্ধ করে দিবাকরও ঘুমিয়ে পড়েছিলেন এরপর পরদিন সকালে উঠে আবিষ্কার করলেন টেবিলের উপর মিষ্টির খালি হাঁড়ির তলায় ভাঁজ করা একটা তেলচিটে দশ টাকার নোট তবে আসল ব্যাপারটা জানতে পেলেন আরও দিন কয়েক পরে থিসিস শেষ করে তখন ফিরে এসেছেন কলকাতায় বন্ধু রাজীবের ফোন এল একদিন প্রায় মিরাকেল ব্যাপার ঘটে গেছে কালীগঞ্জে একদল মানুষ হঠাৎ স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে শহরের সব পানাপুকুর একে-একে সাফ করে ফেলেছে ব্যাপার দেখে চক্ষুলজ্জার খাতিরে নড়েচড়ে বসেছে মিউনিসিপ্যালিটিও নোংরা নর্দমা, ডোবা, পানাপুকুর সব এখন ঝকঝকে মশার উৎপাতও উধাও কালীগঞ্জ আর সেই কালীগঞ্জ নেই পালটে গেছে একদম

ছবি: আনন্দমেলা পত্রিকার সৌজন্যে

প্রথম প্রকাশ: আনন্দমেলা: ২০ ডিসেম্বর ২০০৮

আপলোড: ৮/১০/২১

No comments:

Post a Comment