কষ্ট
শিশির বিশ্বাস
পুরো তিনটে দিন পরে আজ টাঙা নিয়ে বের হয়েছিল ছোটকু।
তারপর
কখন
চকবাজারে
পথের
পাশে
গাড়ি
দাঁড়
করিয়ে
ঘাড়
গুঁজে
ঢুলতে
শুরু
করেছে‚ হুঁশ নেই। হঠাৎ কানের কাছে এক
যাত্রীর
আওয়াজে
সম্বিৎ
ফিরে এল। ধড়মড়িয়ে উঠে
দু’চোখের কোলে গড়িয়ে নামা জলের ধারা মুছে নিল গামছায়।
টাঙার
পাশে
দাঁড়িয়ে
ধোপদুস্ত
পোষাকে
এক
যাত্রী। সঙ্গে বড়
এক
বেডিং। ও চোখ তুলতেই বিরক্তি ভরা
গলায়
বলল‚ ‘কেমনধারা টাঙাওয়ালা হে!
সাতসকালে
ঘুমোতে
লেগেছ!’
গলা ঝেড়ে কাচুমাচু মুখে ছোটকু বলল‚
‘কোথায়
যাবেন
বাবু?’
‘স্টেশন।
ন’টার ট্রেন ধরিয়ে দেওয়া চাই।’
পথের পাশে বাজার কমিটির ঘড়িঘরের দিকে ঘাড় ফেরাল ছোটকু।
ঘড়ি
খারাপ
হয়ে
গেছে
অনেক
দিন। তবু টাওয়ারের ছায়া দেখে সময় বেশ
বুঝে
নিতে
পারে। কিন্তু আজ
শূণ্য
দৃষ্টিতে
সেদিকে
খানিক
তাকিয়ে
শেষে
ঘাড়
নামিয়ে
বলে‚ ‘কটা বাজে বাবু?’
‘সোয়া আটটা।’
রীতিমত
উঠকণ্ঠিত
গলায়
উত্তর
এল‚ ‘ঘুম থেকে উঠতেই দেরি হয়ে
গেছে। এই সকালে এদিকে যে
ট্যাক্সি
মেলে
না
কে
জানত! একটু টেনে চলিস বাপু।’
উত্তরের
অপেক্ষা
না
করেই সঙ্গের মালপত্র নিয়ে তিনি উঠে
বসলেন
টাঙায়।
স্টেশন কাছে নয়।
সময়
খুবই
কম। বুড়ো মাদী ঘোড়াটারও বয়স
হয়েছে। তেমন আর
ছুটতে
পারে
না। তবু ভদ্রলোক গাড়িতে উঠে
বসতে
ছোটকু আর
দ্বিরুক্তি
করল
না। ঘোড়ার বলগার দড়ি
হাতে
তুলে
নিল। ছোটখাট শীর্ণ মাদি ঘোড়াটাও সেই
থেকে
দাঁড়িয়ে
ধুকছিল। ইঙ্গিত পেয়ে অল্প মাথা তুলে নড়ে
উঠল। তারপর প্রায় কাঠির মতো
সরু
পায়ে
চলতে
শুরু
করল।
‘আরে আরে!’ প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন ভদ্রলোক‚ ‘ও কীভাবে চলছে তোর ঘোড়া! কষে চাবকা।
ট্রেন
ধরতে
না
পারলে
সর্বনাশ!’
‘ভাববেন না বাবু।’
ছোটকু
বলে‚ ‘আসলে গত
কয়টা
দিন
একদম
যত্ন
হয়নি
ঘোড়াটার। ঠিকমতো খাবারটাও দেওয়া হয়নি।’
‘সেকী রে!’
‘কী আর করব বলুন বাবু।
কদিন মনের ভিতর
বড্ড
কষ্ট।’ ধরা গলা
ছোটকুর।
‘কেন রে?’
‘তাও আপনি জিগগেস করলেন বাবু।’
দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল ছোটকুর।
‘জানেন
বাবু‚ গত পরশু আমার একমাত্র জোয়ান ছেলেটা হঠাৎ মরে
গেল।’
‘সেকী! কী হয়েছিল?’
‘কী জানি বাবু।’
গাড়ি
চালাতে
চালাতেই
ছোটকু
আগ্রহে
ভদ্রলোকের
দিকে
তাকাল‚ ‘জ্বর হয়েছিল তো। তিনদিন বেহুঁশ হয়ে
পড়ে
রইল
হাসপাতালে। তারপর....।’
‘আরে‚
আরে
মেরে
ফেলবি
নাকি!’ কথার মাঝেই খেঁকিয়ে উঠলেন ভদ্রলোক‚
‘আর
একটু
হলেই
গাড়ি
যে
ফুটপাতে
তুলে
দিচ্ছিলি। আর যেভাবে গপ্প শুরু করেছিস‚ ট্রেন নির্ঘাত ফেল করাবি। তোর গদাই লসকর ঘোড়া আর গড়ির দিকে নজর দে। তাড়াতাড়ি।’
ছোটকুরই ভুল।
খেয়াল
না
থাকায়
গাড়ি
কখন
ফুটপাত
ঘেঁসে
এসেছে। ফের সোজা হয়ে
বসে
ও। টাঙা ঠিক
পথে
আনতে
সময়
লাগে
একটু। তারপর অল্প ঘাড়
ফিরিয়ে
ফের
ভদ্রলোকের
দিকে
তাকাতেই
তিনি
খরখরে
গলায়
বলেন‚ ‘বগবগ ছেড়ে এবার ঠিকমতো গাড়ি চালা দেখি। মনে রাখিস‚ ট্রেনটা কিন্তু ধরিয়ে দিতে হবে।’
ঘোড়া জোরেই ছুটছে এখন।
তবু
মানুষটিকে
খুশি
করার
জন্য
ছোটকু বার
কয়েক
চাবুক
হাঁকায়। তারপর আড়
চোখে
ঘন
ঘন
তাকাতে
থাকে
ভদ্রলোকের
দিকে। কিন্তু পথ
শেষ
হয়ে
আসতে
থাকে‚ সাহস হয়ে
ওঠে
না। গাড়ি আরও
জোরে
ছোটাবার
জন্য
সমানে
তাগাদা
লাগাচ্ছেন
তিনি।
স্টেশনে পৌঁছোতে আর দেরি করেননি ভদ্রলোক।
ট্রেনের
ঘণ্টা
পড়েনি
তখনও। ভাড়া মিটিয়ে ছুটেছেন কাউন্টারের দিকে। মুখ ভরতি ফেনা‚ জীর্ণশীর্ণ ঘোড়াটা হাঁপাচ্ছে তখন।
অনেকটা সময় কেটে গেছে তারপর।
নয়টার
ট্রেনই
শুধু
নয়‚ কখন যে
সাড়ে
এগারোটার
ট্রেনও
বেরিয়ে
গেছে
হুঁশ
নেই
ছোটকুর। যথাস্থানে বসে
ঘাড়
গুঁজে
সেই
আগের
মতোই
ঝিমোচ্ছে। শেষ পর্যন্ত নতুন এক
যাত্রীই
ফের
হুঁশ
ফেরাল
ওর।
‘হেই‚
ময়দান
যাবে
গো
বুড়ো?’
হুঁশ ফিরতে ফের সোজা হয়ে বসে ছোটকু।
চড়া
রোদে
ইতিমধ্যে
ঝামা
হয়ে
উঠেছে
চারদিক। পুড়ে যাচ্ছে শরীর। সেই রোদে ঘোড়াটা সমানে পা
ঠুকে
চলেছে। তাড়াতাড়ি চোখ
দুটো
মুছে
নিয়ে
বলে‚ ‘ময়দান
‘মিটিনমাঠে’
যাবেন
বাবু?’
‘হ্যাঁ‚ ওই মিটিং ময়দান।’ মাথা নাড়েন ভদ্রলোক। তারপর উত্তরের অপেক্ষা না
করে
লাফিয়ে
টাঙায়
উঠে
বসেন। ছোটকুর ইঙ্গিত পেয়ে ঘোড়া চলতে শুরু করে।
রোদ চড়া হলেও অল্প হাওয়া আছে।
ছুটন্ত
গাড়িতে
বসে
কিছু
আরাম
বোধ
হয়। অল্প সময়
পরে
ছোটকু
ঘাড়
ফেরায়
সামান্য। রুমাল
দিয়ে বাবুটি মুখের ঘাম মুছছিলেন। ওকে তাকাতে দেখে বললেন‚ ‘তোর পক্ষীরাজের বাচ্চাকে একটু জোরে ছোটা দেখি।
যা
রোদ‚ তবু একটু হাওয়া মিলবে।’
‘আমার ছেলেটাও বাবু ওর নাম দিয়েছিল পক্ষীরাজ।’
চোখ
দুটো
হঠাৎ
উজ্জ্বল
হয়ে
ওঠে
ছোটকুর।
‘সে তো বটেই।’
মুখ
বেঁকিয়ে
হাসলেন
ভদ্রলোক। ‘যেমন তোর
ঘোড়া। তেমন সুপুত্তুর ছেলে।’
‘তা ছিল বাবু।
বড়
ভাল
ছিল
ছেলেটা।’
‘সে তো বুঝতেই পারছি।
এবার
কথা
বন্ধ
করে
গাড়িটা
একটু
জোরে
চালা।’
ছোটকু অবশ্য থামল না।
সামান্য
উসখুস
করে
বলল‚ ‘জানেন বাবু তিন
দিন
আগে
আমার
সেই
জোয়ান
ছেলেটা
হঠাৎ
মরে
গেছে।’
‘ও–ও–ও।’
‘হ্যাঁ গো বাবু।’
আগ্রহে
ঝুঁকে
পড়ল
ছোটকু‚ ‘ওই একমাত্র ছেলে ছিল
আমার। এই বুড়ো বয়সে…।’
‘তা ঠিক।
তবে
শুধু
ছেলের
কথা
বলছিস কেন? কতবড় একজন মানুষ মারা গেলেন বল!’
‘কে! কে মারা গেলেন বাবু?’
‘সেকী রে! শুনিসনি! অথচ তোদের
কথা‚ দেশের কথা
ভেবে
সারা
জীবন
কাজ
করে
গেছেন। ঘর–সংসার করার সময়টুকুও মেলেনি।
তবু
তো
তোর
ঘরসংসার
আছে। ঘরে ফিরলেই বউ
ভাতের
থালা
ধরে
দেবে। মানুষটির তেমন ভাগ্যও হয়নি রে।’
বুক থেকে ফের চাপা নিঃশ্বাস বের হয়ে এল ছোটকুর।
মনে
পড়ে
গেল
পুরোনো
দিনের
অনেক
কথা। সত্যিই ঘরসংসার ছিল
ওর। কিন্তু সে–সব কবেই শেষ
হয়ে
গেছে! বউ মারা গেছে অনেক বছর আগে।
ছেলে
রতনের
বয়স
তখন
মাত্র
দুই
বছর। নতুন করে
বাঁচবার
জন্য
বুকেপিঠে
করে
মানুষ
করেছিল
তাকে। সাধ ছিল‚ বিয়ে দেবে রতনের।
সংসারের
ভার
দিয়ে
অবসর
নেবে
তারপর। মাত্র কদিন আগে
শেষ
হয়ে
গেছে
সব
সাধ‚ আশা।
সেকথা
বলতে
গিয়েও
কী
ভেবে
আর
এগোল
না। ঢোঁক গিয়ে বলল‚ ‘সে ঠিক কথা বাবু।
মুখ্যু
মানুষ। কী বা
জানি। খুব বড়
মানুষ
ছিলেন
বুঝি?’
‘ছিলেন রে! মানুষটার মৃত্যুতে কী
যে
ক্ষতি
হয়ে
গেল
দেশের। সেই মানুষটার কথা
তোদের
বলব
বলেই
ভোরে
বের
হয়েছি। বিকেলে ময়দানে তাঁর স্মরণসভায় আসিস। সব জানতে পারবি।’
‘যাব তাহলে।
ঠিক
কথা
বাবু‚ মৃত্যু বড়
দুঃখের। বড় কষ্টের। সেই ছেলেবেলায় বাবা–মা মারা গেল।
তারপর
একটু
গুছিয়ে
বসতে
না
বসতেই
বউটা। সেসব তবু
সহ্য
করেছি। বয়স কম
ছিল
তো। কিন্তু––।’
ছোটকুর কথার মাঝেই মৃদু ধমকে ওঠেন ভদ্রলোক‚
‘থাম রে
বাপু। খানিক বাদে লম্বা লেকচার দিতে হবে। একটু গুছিয়ে নিতে দে।’
ময়দানের মাঠ এসে গেল অল্প পরেই।
তারস্বরে
লাউড
স্পীকারে
ঘোষণা
চলেছ। এই রোদেও বেশ
ভিড়। ভদ্রলোক গাড়ি থেমে নামতেই কয়েকজন ছুটে এল। তাদের সঙ্গে চলে
গেলেন
তিনি। খানিক অপেক্ষার পর একজন এসে
ভাড়া বাবদ দশ টাকার একটা নোট ওর হাতে
ধরিয়ে দিয়ে গেল।
স্টেশন
থেকে
ময়দান
মাঠ। ভাড়া বিশ
টাকার
কম
নয়। অন্য
দিন হলে হয়তো আপত্তি জানাত। কিন্তু রতনের মৃত্যুর পরে মনের ভিতরটা একেবারেই শূণ্য হয়ে
গেছে। অথচ সেই
কষ্টের
কথা
এই
কদিনে
ও
বলতেও
পারেনি
কাউকে। একটি মানুষও পায়নি‚ যাকে ও ভিতরের কষ্টের কথা বলতে পারে।
রতন
কত
ভালবাসত
ওকে। বাবা বলতে অজ্ঞান ছিল
ছেলেটা। কত আশা
ছিল
ওকে
নিয়ে।
এসব বলে ভিতরের কষ্টের বোঝা একটু হালকা করতে চায় ও।
কিন্তু
কেউ
শুনতে
চায়
না। প্রতিবেশিরা ওরই
মতো
গরীবগুর্বো। সারাদিন ছুটে বেড়ায় পেটের দায়ে। এসব
শোনার সময় কারো নেই।
কদিন
চেষ্টা
তো
কম
করেনি!
বেলা অনেক হয়েছে।
মাথার
উপর
গনগনে
সূর্য
ফুটিফাটা
করে
দিচ্ছে। সকালে বেরোবার সময়
পেটে
কিছু
দেওয়
হয়নি। মনেও আসেনি। এখন জানান দিচ্ছে। ডেরায় ফিরে রান্না চাপাতে হবে। ঘোড়াটাকেও জাবনা দিতে হবে। আগে রতনই করত
এসব। দুপুরে ঘরে
ফিরলেই
ছুটে
আসত। লেগে পড়ত
ঘোড়াটার
পরিচর্যায়। ততক্ষণ
ছোটকুর বিশ্রামের সময়। তারপর খেতে বসত
দু’জন।
বাপ–ছেলেতে কত গল্প হত।
এই
কদিন
আগের
কথা। কথায় কথায় বলে
ফেলেছিল‚ বুড়ো ঘোড়াটাকে বেচে দেবে এবার।
নতুন
একটা
ঘোড়া
কিনবে। শুনে হাঁ–হাঁ করে উঠেছিল রতন‚
‘না–না বাবা।
অমন
কাজ
করো
না। সেই জন্ম থেকে দেখছি ওকে। যতদিন বাঁচে এখানেই থাকবে।’
‘কথা শোনো ছেলের!’ রতনের কথায় কপালে ভাঁজ পড়েছিল ছোটকুর।
‘দুটো
ঘোড়ার
খরচ
চলবে
কেমন
করে?’
‘সে তুমি ভেবনা বাবা।’
ঘাড়
ঝাঁকিয়ে
জানিয়ে
দিয়েছিল
রতন‚ ‘সকালে ঘরের কাজ
সেরে
মাঠ
থেকে
ঘাস
নিয়ে
আসব। কিছু তো
সুরাহা
হবে।’
সেই রতনই চলে গেল।
রয়ে
গেল
ঘোড়াটা। বুক ঠেলে বের
হয়ে
আসা
উদগত
কান্না
কোনওক্রমে
দমন
করল
ছোটকু। মুখ তুলতে নজরে পড়ল
অদূরে
বাজারের
দিকে
যাবার
মোড়ের
কাছে
মস্ত
বোঝা
মাথায়
মাঝবয়েসি
একজন। ছোটকু নতুন যাত্রীর খোঁজে বাজারের দিকেই যাচ্ছিল। কাছে আসতে চিনতে পারল‚ ওদেরই পাড়ার হরেন দাস।
বাড়িতেই
ছোট
এক
দোকান
আছে। সম্ভবত বাজারে মালপত্র কিনতে এসেছিল। ফিরছে এখন। গাড়ির গতি
কমিয়ে
সামান্য
ইতস্তত
করে
ছোটকু
বলল‚ ‘কেমন আছেন দাদা?’
‘আরে ছোটকু তুই? কী ভাগ্যি!’
ঘাড়
তুলে
হরেন
দাস
বলল‚ ‘বাড়ির দিকে যাচ্ছিস বুঝি?
একটু
তুলে
নে
না। এই বয়সে আর
পেরে
উঠি
না
রে। পয়সাও নেই
যে‚ মুটে নেব।’
মিথ্যে বলেনি হরেন দাস।
সংসারের
অবস্থা
মোটেই
ভাল
নয়। ঘরে অনেকগুলো পুষ্যি। বড় ছেলেটা অমানুষ। প্রায়ই টাকা–পয়সা চুরি করে।
কিছু
বলতে
গেলে
উলটে
বুড়ো
বাপকে
পেটায়। ইচ্ছে ছিল‚ ঘরে ফেরার আগে আর একটা যাত্রীর খোঁজ করবে।
তবু
গাড়ি
থামিয়ে
বলল‚ ‘উঠে আসেন দাদা।’
‘ভগবান তোর মঙ্গল করুন।’
গাড়িতে
মোট
তুলে
উঠে
পড়ে
হরেন
দাস‚ ‘বেঁচে থাক।’
‘ওই আশীর্বাদ আর করবেন না দাদা।
যার
বেঁচে
থাকার
কথা‚ সেই যখন
চলে
গেল। জানেন তো
সব। কয়টা দিন
কী
কষ্টে
যে…’
বলতে বলতে থেমে গেল ছোটকু।
কোনও
সাড়া
নেই ওদিক থেকে। ঘাড় ফিরিয়ে দেখল‚
হরেন
দাস
চোখ
বুঁজে
ঢুলতে
শরু
করেছে। ইতস্তত করে
ছোটকু
বলল‚ ‘দাদা ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি?’
‘অ্যাঁ!’ ধড়মড়িয়ে উঠল হরেন দাস।
‘হ্যাঁ
রে
বাবা। গত রাতে ছেলের তাণ্ডবে দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি।
সকালে
উঠেই
বের
হয়েছি
কেনাকাটা
সারতে। বাড়ি
পৌঁছেই ফের দোকানে বসতে হবে। একটু…’
কথা শেষ না করেই ফের ঢুলতে শুরু করে হরেন দাস।
কথা শেষ না করেই ফের ঢুলতে শুরু করে হরেন দাস।
ছোটকু কথা বাড়ায় না আর।
একটা
আর্ত
বোবা
কান্না
শুধু
ওর
বুক
চিরে
বেরিয়ে
আসতে
থাকে।
একসময় ডেরায় ফিরে আসে মানুষটা।
খড়–ভূষি মেখে খেতে দেয় ঘোড়াটাকে।
শীর্ণ
পরিশ্রান্ত
ঘোড়াটার
গায়ে–মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
রতন
এই
সময়
এভাবেই
আদর
করত
ঘোড়াটাকে। বিড়বিড় করে
বলে‚ ‘নে মা
খেয়ে
নে। বুড়ো হয়েছি আমি। তোকে ভালমতো যত্ন করতে পারিনে। যে পারত‚ সে তো ছেড়ে চলে গেল।
কী
করবি
মা
বল?’
ক্ষুধার্ত ঘোড়াটা মুখ ডুবিয়ে গোগ্রাসে খাচ্ছিল।
হঠাৎ
মুখ
তুলে
চিবোতে
চিবোতে
বড়
একটা
নিঃশ্বাস
ছাড়ে।
প্রায় যেন চমকে ওঠে ছোটকু। তবে কি ঘোড়াটা ওর কথা‚ ওর কষ্ট বুঝতে পেরেছে! মুহূর্তে ওর চোখের কোণে দু’ফোঁটা জল চিকচিক করে ওঠে। বলে‚ ‘তোরা মায়ের জাত রে! দয়ামায়া আছে। অন্যদের মতো নিষ্ঠুর নোস।’
প্রায় যেন চমকে ওঠে ছোটকু। তবে কি ঘোড়াটা ওর কথা‚ ওর কষ্ট বুঝতে পেরেছে! মুহূর্তে ওর চোখের কোণে দু’ফোঁটা জল চিকচিক করে ওঠে। বলে‚ ‘তোরা মায়ের জাত রে! দয়ামায়া আছে। অন্যদের মতো নিষ্ঠুর নোস।’
ঘোড়াটার কানের কাছে মুখ নিয়ে ছোটকু এরপর বুকের ভিতর জমে ওঠা কষ্টের কথা শোনাতে শুরু করে।*
*রুশ ছোটগল্পকার ‘অ্যান্টন
চেখফ’ রচিত ‘মিজারি’ গল্পের ছায়া অনুসরণে।
ছবি: প্রকাশ গুপ্ত
Bhalo laglo...asadharan lekhani...
ReplyDeleteExcellent .An unique adaptation.Thanks for such writing.
ReplyDeleteঅসাধারন
ReplyDeleteলেখনির ধার দারুন। কষ্ট টা কষ্টের মতই লাগল।
ReplyDeleteস্বকীয়তা ফুটিয়ে তুলেছেন, সুন্দর লিখেছেন।
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো।
ReplyDelete