বিশালাক্ষী মন্দিরের চৌকিদার
শিশির বিশ্বাস
সুন্দরবনে বড় এক নদী গোসাবা গাঙ। তবে পৌঁছতে
গেলে পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ। সাতজেলিয়ার আবাদ থেকে দত্তর গাঙ। তারপর কালিরচরের পাশ
দিয়ে হাড়িভাঙা নদী হয়ে চামটা জঙ্গলের গভীরে দেউলভারানী খাল ধরে আরো দক্ষিণে এগোলে
পাওয়া যাবে আর এক খাল গেরাপিতলা ফোড়ন। সরু খালের দুই ধারে ঘন ঝিমঝিম করা চামটার
জঙ্গল। দুই পাশে বড় বড় গাছের দরুন দিন দুপুরেও অন্ধকার। তার উপর খালের প্রায় পড়তি
দশা। অনেক স্থানেই চড়া পড়ে বেহাল। বড় নৌকো হলে মাঝি ঢোকাতেই চাইবে না। কোথায় নৌকো
চড়ায় আটকাবে ঠিক নেই। তাহলে পড়ে থাকতে হবে ফের জোয়ারের অপেক্ষায়।
তা এই গেরাপিতলা ফোড়ন ধরে এগোলেই
গোসাবা গাঙ। সব মিলিয়ে প্রায় এক ভাটার পথ। অন্য পথও আছে। তবে ছোট নৌকো নিয়ে বাদার
মানুষের এই পথটাই বেশি পছন্দের। এবার এই গোসাবা গাঙ ধরে এগিয়ে চলো দক্ষিণে। যত এগোবে
বাড়তেই থাকবে নদীর আকার। জোয়ারে একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়বে। টালমাটাল হয়ে উঠবে
নৌকো। বেগতিক হলে মাঝিরা বিড়বিড় করে উঠবে, বদর–বদর।
প্রবাদ, আবাদে পুরনো দিনের এক ডাকসাইটে
মাঝি এই বদর। অনেকে বলেন, রাজা প্রতাপাদিত্যর নৌবাহিনীর প্রধান কাণ্ডারি ছিলেন তিনি।
যত বড় ঝড়–তুফান হোক, বদর মাঝির কাছে সব ঠাণ্ডা। তিনি গত হয়েছেন কয়েকশো বছর
আগে। কিন্তু বাদার মানুষ ভোলেনি। নৌকো ঝড়–তুফানের মুখে পড়লে এখনো তাঁকে স্মরণ করে
সবাই। তিনিই রক্ষা করবেন।
তবে জোয়ারে যাই হোক, ভাটায় কিছু নিরাপদ। তখন মোহনার
পানে নৌকোও ছুটবে অনেক বেগে। দাঁড় টানতে ঘাম ঝরবে না। পথ তো কম নয়! আর এইভাবেই
তারা একসময় পৌঁছে যাবে আরো দক্ষিণে মোহনার কাছে। ঝকঝকে নীল জলের সেই দিগন্ত
বিস্তৃত বিস্তীর্ণ জলরাশি দেখে ঢিপঢিপ করবে নতুন আগন্তুকের বুক। তবে বাদার মানুষ
এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। মোহনার কাছে পৌঁছে ওরা এবার নৌকো ঘোরাবে ডান দিকের
জঙ্গলে। কাছে গেলেই চমৎকার এক বালির চর। ভাটায় খেলে বেড়ায় অজস্র লাল কাঁকড়ার ঝাঁক।
ঝকঝকে বালির উপর অল্প ঘাস জঙ্গল। তারই মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে একজোড়া তালগাছ।
মাথার উপর ঝকঝকে পাতার দিকে তাকালে বোঝা যায়, যথেষ্ট তেজাল।
সুন্দরবনে এতবার এসেছি। কাটিয়েছি
দিনের পর দিন, এমন তালগাছ বাদার আবাদেও বেশি দেখিনি। অথচ সন্দেহ নেই, ভরা জোয়ারে মোহনার নোনা জলের ঢেউ
আছড়ে পড়ে গাছের গোড়ায়। তবু টিকে রয়েছে বহাল তবিয়তে। সুন্দরবনে মাধব সর্দার ওরফে
মাধব বাউলের সঙ্গে গিয়েছিলাম সেই একবারই। বালির চরে জোড়া তালগাছ মাধব বাউলেই
দেখিয়েছিল প্রথম। হাঁ করে খানিক তাকিয়ে থেকে অজান্তেই বলে ফেলেছিলাম, ‘বাদার জঙ্গলে এমন তালগাছ তো আগে
দেখিনি বাউলেদা! নতুন গাছ বুঝি?’
আসলে দুটি গাছের মসৃণ গুঁড়ি, ঝকঝকে সবুজ পাতার দিকে তাকিয়ে
তেমনই মনে হয়েছিল তখন। উত্তরে বাউলে মুচকি হেসে বলেছিল, ‘তালগাছ কতদিন বাঁচে জানা নেই
দাদাবাবু। তবে এই গাছ আমি দেখছি সেই ছেলেবেলা থেকে। সেসময় গাঁয়ের প্রাচীন মানুষের
কাছে শুনেছি, তাঁদের বাপ–ঠাকুরদারাও নাকি দেখেছেন এই গাছ। ঠিক আজকের
মতোই ঝকঝকে তখনো। অনেকেই বলেন, ওনারা আসলে জগাই–মাধাই। বালির চরে গাছ হয়ে রয়েছে।’
বাউলের সেই কথায় আমি অবশ্য
চমকাইনি খুব। বাদা জঙ্গলে ঘোরাঘুরি তো কম দিন নয়। আর তাতেই জানি, এখানের শুলো ভরা নোনা মাটি আর
জঙ্গলের গভীরে শুধু নরখাদক বাঘ নয়, রয়েছে আরো অনেক রোমাঞ্চ আর
রহস্য। বাদার ডাকসাইটে গুনিন মাধব বাউলের খোঁজ পেয়ে তাই সঙ্গ নিয়েছিলাম সেবার। দুই
সাগরেদ পরান আর নিমাইকে নিয়ে কী দরকারে বাদার জঙ্গলে যাবে। খবর পেয়ে ধাওয়া
করেছিলাম আমিও।
কোথায় যাওয়া হচ্ছে, জানার দরকার বোধ করিনি। বাদার
জঙ্গলে পুরনো দিনের এই সব বাউলে–গুনিনদের সঙ্গ আমার কাছে বরাবরই কিছু অন্য রকম।
সেবার নিরাশ করেনি মাধব বাউলেও। তা সে কথা থাক এখন, বরং আগের কথাই বলি। সেদিন বাউলের
কথায় কিছুমাত্র অবাক না হয়ে বলেছিলাম, ‘জগাই–মাধাই কে বাউলেদা?’
‘জগাই–মাধাই দুই ভাই দাদাবাবু।
আসল নরখাদক।’ চোখ নাচিয়ে বাউলে উত্তর দিয়েছিল। ‘ওদের তাণ্ডবে বাদার মানুষের তখন
এককথায় মরণদশা। প্রতিদিন একজন করে মানুষ চাইই চাই তেনাদের। কবে যে কার পালা আসেবে
ঠিক নেই। ভয়ে কাঠ হয়ে থাকত সবাই।’
‘এ তো সেই বক রাক্ষসের মতো গল্প
বাউলেদা!’
বাদা গ্রামের নিরক্ষর মানুষ হলেও
মহাভারতের কথা মাধব বাউলের ভালই জানা। উত্তরে অল্প মাথা নেড়ে বলল, ‘কতকটা তেমনই দাদাবাবু। তা
মহাভারতের কালে উদ্ধার করতে এগিয়ে এসেছিলেন ভীম। এযুগে ভীম আর কোথায়? উদ্ধার পাওয়ার
জন্য বনবিবির থানে তাই ধরনা দেওয়াই সার। শেষে উদ্ধার করলেন মা বিশালাক্ষী দেবী।’
‘বিশালাক্ষী দেবী?’
অবাক হয়ে প্রশ্ন করার কারণ, বাদাবনে বহুবার এলেও, বিশালাক্ষী দেবীর কথা শুনিনি
আগে। বাদাবনে বনবিবিই সবার দেবতা। বাঘের হাত থেকে বাদার মানুষের রক্ষাকর্ত্রী
তিনিই।
আমার কথায় খানিক থম হয়ে থেকে
বাউলে তারপর এক অদ্ভুত গল্প শুনিয়েছিল, ‘দাদাবাবু, মা বিশালাক্ষী দুর্গার অন্য এক
রূপ। তা সেবার অমাবস্যার ভরা কোটালের পরে বাদা গ্রামের তারিণী সর্দার এই বালির চরে
এসেছিল কাঁকড়া ধরতে। সঙ্গে জোয়ানমর্দ ছেলে লোচন। তখন সন্ধের অন্ধকার নামতে দেরি
নেই। ভাটায় জল নেমে গেছে অনেকটাই। জোয়ারে উঠে আসা কাঁকড়ার ঝাঁক চড়ায় গর্ত করে ঢুকে
পড়তে শুরু করেছে। যেগুলো জোয়ারের জোরাল স্রোত সামাল দিতে ঢুকে পড়েছিল গর্জন গাছের
ঝাঁকড়া শেকড়ের ঝোপের ভিতরে, এক এক করে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। বাদার কাঁকড়া ধরা নৌকো
এই সময়ের জন্যই অপেক্ষা করে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যে ধরা ফেলা যায় অনেক। টপাটপ
কুড়িয়ে নিলেই হল।
‘তা ওরাও তখন সন্ধের অল্প আলোয়
কাঁকড়া ধরায় ব্যস্ত। কোনো দিকে চোখ নেই। নজর শুধু ভেজা মাটিতে কাঁকড়ার দিকে।
মানুষের সাড়া পেলেই তারা ছুটোছুটি শুরু করে দেয়। ফাঁক পেলেই সেঁধিয়ে যায় গর্তের
ভিতর। তখন গর্তের ভিতর থেকে সেই কাঁকড়া বের করতে অনেক হ্যাপা। পাকড়াতে হবে তার
আগেই।
‘স্বভাবতই তখন কোনো দিকে নজর থাকে
না কারো। বাদার অভিজ্ঞ নরখাদক সেই সুযোগটাই নিয়ে থাকেন। তা সেদিন জগাই–মাধাইও
হাজির গোসাবা গাঙের এই চড়ায়। বেচারা তারিণী তা জানবে কেমন করে? তাহলে কী আর কাঁকড়া
ধরতে নাম? অগত্যা ঘটে গেল সেই অঘটন। জোয়ান লোচন তখন কাঁকড়া ধাওয়া করে অনেকটাই
জঙ্গলের দিকে চলে গেছে, হঠাৎই জগাই–মাধাই লাফিয়ে এসে পড়ল হাত কয়েকের মধ্যে। আধো
অন্ধকারে তাদের সেই রূপ দেখে ডাকাবুকো লোচনের তখন খাঁচা থেকে প্রাণপাখি উড়ে যাবার
জোগাড়। গলা দিয়ে এক চিলতে শব্দ করার ক্ষমতাও নেই। শুধু হাত দুটোই উঠে গেল শূন্যে।
আতঙ্কে স্থির হয়ে গেল শরীর।
‘অদূরে কাঁকড়া ধরায় ব্যস্ত তারিণী
জানতেও পারত না হয়তো। কিন্তু মা বিশালাক্ষীর ইচ্ছা তেমন ছিল না বোধ হয়। তাই হঠাৎই
তার চোখ পড়েছিল অদূরে ছেলের দিকে। তারপরেই আর্তস্বরে বলে উঠেছিল, বাশুলী মাগো রক্ষা করো, রক্ষা করো আমার লোচনরে।
‘বাদার নিরক্ষর মানুষ অনেকেই মা
বিশালাক্ষীকে বাশুলীমা বলে থাকে। তা সে যাই হোক, তারিণী সর্দারের ওই প্রার্থনার
পরেই বিদ্যুতের ঝলকানির সঙ্গে কড়–কড়াত শব্দে বাজ পড়েছিল কাছেই। কানের কাছে সেই
ভয়ানক শব্দে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল তারিণী। তারপর জ্ঞান যখন ফিরল, দেখে রাতের অন্ধকার তেমন ঘন হয়নি
তখনও। সেই মরা আলোতেও দেখতে পেল লোচনের জ্ঞানহীন দেহ যথাস্থানে পড়ে আছে তখনো। গায়ে
কুটোর আঁচড়টিও লাগেনি। কাছে জগাই–মাধাইয়ের চিহ্নও নেই। আচমকা বাজের শব্দে শিকার ফেলে
পালিয়েছে।
‘তা দাদাবাবু, সেই সন্ধেয় ওইভাবে রক্ষা মিলতে
তারিণী সর্দার আর এক মুহূর্ত দেরি করেনি। লোচনকে নিয়ে পালিয়ে এসেছিল। তাই অন্য
কিছু নজরে পড়েনি তখন। কিন্তু সেই দিনের পরে যারা এদিকে এসেছে তাদের কারো নজর
এড়ায়নি রাতারাতি বালির চড়ায় গজিয়ে ওঠা তালগাছ দুটো। সবাই বলে, ভক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে মা
বিশালাক্ষী জগাই–মাধাইকে জোড়া তালগাছ করে দিয়েছেন। সেই থেকে তেনারা এই বালির
চড়াতেই বন্দি হয়ে আছেন। তবে…’
‘তবে কী?’ বাউলে বলতে গিয়ে থেমে
যেতে রুদ্ধশ্বাসে প্রশ্ন করলাম।
‘অনেকেই বলে, জগাই–মাধাই নাকি আজও কখনো ফের
স্বমূর্তি ধরে ঘুরে বেড়ায়। মা বিশালাক্ষীর কৃপায় ওইটুকু ছাড় নাকি মিলেছে এখন। তবে
বেশি দূর যাবার হুকুম নেই। সেই সময় কেউ চড়ায় নামলে আর রেহাই নেই তার।’
মাধব বাউলের সেই কথার পরে আর বলতে
পারিনি কিছু। নইলে গল্প শুনে খুব ইচ্ছে হয়েছিল, চড়ায় নামব একবার। ভাল করে নজর
করতে গিয়ে দেখেওছিলাম, বিস্তীর্ণ বালির চড়ায় লাঠির মাথায় বেশ কয়েকটা ছেঁড়া কাপড়, নয়তো গামছার টুকরো। পুরনো যদিও, তবু অটুট রয়েছে এখনো। যাদের জানা
নেই তাদের বলি, বাদা জঙ্গলে কেউ যদি বাঘের আক্রমণে মারা পড়ে, তাহলে সঙ্গীরা তার গামছা নয়তো
পরনের এক টুকরো ছেঁড়া কাপড় লম্বা লাঠি নয়তো কাছেই কোনো গাছের ডালে বেঁধে রেখে
যায়। বাঘের আক্রমণে হতভাগ্য মানুষটির শেষ চিহ্নের সেই নিশানা অন্যদের সতর্ক করে
দেয়, বাঘে
মানুষ নিয়েছে এখানে। সাবধান।
সেদিন দুপুরের জোরাল বাতাসে
নির্জন চরে পতপত করে উড়তে থাকা সেই গোটা কয়েক নিশানার দিকে তাকিয়ে মনের ইচ্ছেটা
তাই আর ব্যক্ত করা যায়নি। শুধু বলেছিলাম, ‘এত জাগ্রত, তবু বিশালাক্ষী দেবীর কোনো
মন্দির তো নেই এদিকে!’
‘আছে দাদাবাবু।’ অল্প মাথা নাড়ল
বাউলে, ‘তবে বাদায় বনবিবির মন্দির অনেক হলেও মা বিশালাক্ষীর
মন্দির মাত্র একটাই। খুব বেশি দূরেও নয় এখান থেকে। সেখানে মায়ে দর্শনে যাব বলেই তো
বের হয়েছি এবার। চলেন।’
সেবার মাধব বাউলের বাদায় আসার
কারণ সেই জানতে পারলাম প্রথম। বেজায় খুশি যে হয়েছিলাম, তা বলাই বাহুল্য।
আমার আগ্রহ দেখে খুশি হয়েছিল
বাউলেও। বালির চর পাশ কাটিয়ে নৌকো এরপর ঢুকে পড়েছিল পাশেই নারায়ণতলি খালে। নামে
খাল হলেও আসলে এটাও নদী। তবে বড় নয় তেমন। দু’ধারে কেওড়া, গরান, গর্জন আর হেঁতালের ঘন জঙ্গল।
বাদার নরখাদকের মনের মতো আস্তানা। এই খাল ধরে দাঁড় বাইতে বাইতে শুধু বাউলে নয়, দুই সঙ্গী পরান আর নিমাইও হঠাৎ
কপালে হাত ঠেকিয়ে বলে উঠল, ‘জয় মা বাশুলী। জয় মা।’
কিছু অবাক হয়েই তাকিয়েছিলাম ওদের
দিকে। কোথায় মন্দির? খালের দুই দিকে শুধুই ম্যানগ্রোভের জঙ্গল। অবশ্য বাদা জঙ্গলে
বনবিবির মন্দির পড়ে থাকে নিতান্তই অযত্নে। গরানের ডাল কেটে কোনোমতে খাড়া করা ছোট
এক ঘর। তিনদিক ঘেরা হলেও সামনেটা খোলা। ভিতরে মা বনবিবির মূর্তি। সঙ্গে শাজঙ্গুলি, দুখে আর দক্ষিণরায়। নেহাত মানত
না থাকলে নামে না কেউ। নৌকোয় বসেই কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রণাম সেরে নেয়। তারই মধ্যে
কিছু ব্যতিক্রম দেখেছি মৈপীঠের বনবিবির মন্দির। গোলপাতার চালাঘর হলেও যথেষ্ট বড়। হঠাৎ
দেখলে গাঁয়ের কোনো সম্পন্ন গৃহস্থের ঘর মনে হবে। সামনে লম্বা টানা বারান্দা। তবু সেই
মন্দিরেও মানুষের পা পড়ে কমই। বরং চত্বরে বাঘের আনাগোনাই বেশি। ভিজে মাটিতে তাদের মেলা
পায়ের ছাপ।
ভেবেছিলাম, বিশালাক্ষী দেবীর মন্দিরও তেমন
কিছু। কিন্তু ভুল ভাঙতে দেরি হল না। নৌকো খালের ছোট এক বাঁক ঘুরতেই দূর থেকে নজরে
পড়ল খালের পাড়ে প্রায় জল ঘেঁসে টিনের চারচালা এক পাকা মন্দির। ইটের দেওয়ালের সঙ্গে
শানবাঁধানো মেঝে। দুই পাশে টানা বারান্দা।
মন্দির নজরে পড়তেই ফের দেবীর
জয়ধ্বনি শুরু হয়েছিল। থামতেই অবাক হয়ে বললাম, ‘এ যে রীতিমতো পাকা মন্দির
বাউলেদা! ইটের চুনকাম করা দেওয়াল!’
অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেও বাউলে তখন
কেন যে জবাব দেয়নি বুঝলাম মন্দিরের কাছে এসে। আসলে অবাক হবার তখনো বাকি ছিল অনেক।
শুরুতেই বলেছি, জায়গাটা বাদাগ্রাম থেকে অনেকটাই দক্ষিণে, মোহনার কাছে। এক সেই ইলিশ ধরার
মরশুম ছাড়া এদিকে মাছ ধরতে বা মধুর খোঁজে তেমন আসেনা কেউ। দেওয়া হয় না পারমিটও। তাই
এ পর্যন্ত একটা মাছধরা নৌকোও চোখে পড়েনি। সেই স্থানে পাকা মন্দিরের দুই পাশের
বারান্দা এক কথায় ঝকঝকে তকতকে। যেন অল্প আগে কেউ বালতি বালতি জল ঢেলে ধুয়ে দিয়ে
গেছে। সামান্য ধুলো–কাদা বা একটা মরা পাতাও পড়ে নেই।
অবাক হয়ে প্রশ্ন করতে যাব, দেখি জলের যা অবস্থা মন্দিরের
কাছে নৌকো ভেড়ানো গেলেও বাউলে খানিক দূরে নৌকো ভিড়িয়ে জোড়হাতে থম হয়ে রয়েছে।
তাড়াতাড়ি হাত তুলে প্রণাম সারলাম আমিও। স্তব্ধ দুপুরে মন্দিরের ঝকঝকে পাকা
বারান্দায় তখন ছলাৎ ছলাৎ শব্দে আছড়ে পড়ছে শেষ জোয়ারের ঢেউ। সেই দিকে তাকিয়ে হঠাৎ মনে
হল, অল্প
আগে ভরা জোয়ারের ঢেউ ধুয়ে দিয়ে গেছে মন্দিরের পাকা বারান্দা। জল শুকিয়ে যাওয়ায়
ধুলো–কাদার সামান্য চিহ্নও তাই নেই। বারান্দা পার হয়ে মন্দিরের মজবুত কাঠের দরজা
ভেজানো থাকলেও শিকল দেওয়া নেই। কোনো তালাও নজরে পড়ল না।
সুন্দরবনে এমন ব্যতিক্রমী মন্দির
দেখিনি আগে। মনের ভিতর একরাশ প্রশ্ন পাক খেতে শুরু করলেও বাউলের দিকে তাকিয়ে
প্রশ্ন করা গেল না। মানুষটা হঠাৎ যেন পালটে গেছে! দুই হাত জোড় করে থম হয়ে রয়েছে
প্রায়। একই ভাবে থম হয়ে রয়েছে তার দুই সঙ্গী পরান আর নিমাইও।
প্রায় মিনিট পাঁচেক ওইভাবে থেকে
বাউলে হঠাৎই নিস্তব্ধতা ভেঙে গমগমে গলায় বলল, ‘সেবাইতদাদা আছেন নাকি গো?
ভিতরে?’
উত্তরে কোনো সাড়া এল না। দমকা
বাতাসে দরজার পাল্লা সামান্য নড়ে উঠল শুধু। আরো কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষার পর বাউলে
বলল, ‘নৌকো
কাছে ভেড়া পরান।’
আদেশ পেতে পরান আর নিমাই দাঁড়
টানতে শুরু করেছে, বাউলে আমার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে বলল, ‘মা বিশালাক্ষীর এই মন্দির অনেক
দিনের পুরনো দাদাবাবু। তবে সেই প্রথম মন্দির আর নেই এখন। নদীর ভাঙনে তলিয়ে গেছে
অনেক দিন আগে। শোনা যায়, স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেই মন্দির তারিণী সর্দারের ছেলে লোচনই
তৈরি করে দিয়েছিল। মায়ের আশীর্বাদে তার অঢেল সম্পত্তি তখন। যথেষ্ট মজবুত করেই তৈরি
করিয়েছিল মায়ের মন্দির। তারপর সেই মন্দির নদীর ভাঙনে তলিয়ে যাবার পর বহুদিন কোনো
মন্দির আর ছিল না এখানে।
‘তারপর এগিয়ে এলেন অন্য একজন।
শোনা যায়, লোচন সর্দারের মতো তারও কিছুই ছিল না। অন্যের নৌকোয় কাজ
করে দিন চলত। তারপর দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে টাকা ধার করে জাল আর নৌকো নিয়ে ইলিশের
মরশুমে ধাওয়া করেছিল এই নারায়নতলির খালে। ইলিশের আকাল সেবার। তবু এত মাছ নৌকোয়
উঠেছিল যে, ধার মিটিয়েও বহু টাকা লাভ হয়েছিল তার। তারপর লোচনের মতোই
অনেক টাকা খরচ করে বিশালাক্ষী দেবীর এই নতুন মন্দির গড়ে দেন। তবে এটাই সেই মন্দির
কিনা বলা মুশকিল। আসলে দেবী বড়ো জাগ্রত! তাঁর কৃপা থাকলে ফকিরও রাজা হয়ে যায়।
তারিণী সর্দারের ছেলে লোচন, যার সেদিন বেঘোরে মারা পড়ার কথা, হয়ে গিয়েছিল সেকালের লাখপতি। তাই
ভেঙে পড়লেও মন্দির গড়ে দেবার মানুষের অভাব হয় না। যেদিন থেকে দেখছি, এই মন্দির এমনই আনকোরা ঝকঝকে। এক
চিলতে ধুলো–কাদা মন্দিরের বারান্দায় দেখিনি কখনো। দেখুন, আজও তাই!’
মন্দিরের দুই পাশের পাকা
বারান্দায় সামান্য ধুলো–কাদা যে নেই, সে তো আগেই বলেছি। প্রথম নজরে
অবাক হলেও পরে অবশ্য মনে হয়েছে, যেখানে মন্দির, যেভাবে জোয়ারের ঢেউ প্রতিদিন
আছড়ে পড়ে ধুয়ে দিয়ে যায় বারান্দা, তাতে সেটাই স্বাভাবিক। বাউলের ওই কথার পর তা বলিনি
অবশ্য। ইতিমধ্যে নৌকো মন্দিরের কাছে থামতে লম্বা এক তক্তা নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই
তক্তায় পা ফেলে বাউলে নেমে পড়েছে মন্দিরের বারান্দায়। হাতে গামছা বাঁধা ছোট পুঁটলি।
পিছনে বালতি হাতে পরান।
মন্দিরে বারান্দার উঁচুতে পিতলের
বড় এক ঘণ্টা ঝুলছে। ঢং–ঢং শব্দে বার কয়েক সেই ঘণ্টা বাজিয়ে দু’জন এরপর লেগে পড়ল
বালতি বালতি জল ঢেলে মন্দিরের বারান্দা ফের সাফ করার কাজে।
মাধব বাউলের সঙ্গে প্রথম হলেও
বাদায় আগেও এসেছি অনেক বার। জঙ্গলের গভীরেও গেছি। সঙ্গী বাউলে বা অভিজ্ঞ অন্য কেউ
নিয়ে গেছে ভিতরে। তাদের নির্দেশ ছাড়া কখনো নৌকো থেকে জঙ্গলে নামিনি। তাই ইচ্ছে
থাকলেও মন্দির চত্বরে নামা হয়নি আজ। মাধব বাউলে শুধু পরানকেই সঙ্গে নিয়েছে। মন্দিরের
কাছে এসেও ভিতরে ঢোকা হবে না, ভাবতে গিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল।
বাউলের অন্য সঙ্গী নিমাই আমার
সঙ্গে নৌকোতেই বসে। খানিক উসখুস করে বললাম, ‘নিমাই, জায়গাটায় বিপদ আছে নাকি?’
নিমাই ছেলেমানুষ। বছর আঠারো বয়স।
একগাল হেসে বলল, ‘তা বাবু, বাদাবনে বিপদ কোথায় নেই? তাই
নিয়েই চলতে হয়।’
‘মন্দিরে তেমন যায় না কেউ?’
‘এই এতদূরে মাছধরা নৌকো বেশি তো
আসে না। অনেক মেহনত। তবে যারা আসে, মন্দিরে পুজো দিতে আসবেই। পিছনে
জঙ্গলের ভিতর মিষ্টি জলের পুকুর আছে। কলসি ভরে খাবার জলও নিয়ে যায়। সেবার
বাউলেকাকার সঙ্গে আমিও এসেছিলাম। কলসি ভরে জল নিয়ে গেছি।’
‘তা মন্দিরে যাবে না আজ?’
‘নাহ্।’ উত্তরে মাথা নাড়ল নিমাই।
‘তেমন হলে বাউলেকাকা নিজেই বলত। তা আপনি যান না বাবু। এতদূর এসেও মন্দির দর্শন
করবেন না। বাশুলী মা বড় জাগ্রত দেবী।’
ভিতরে ইচ্ছেটা ছিলই। নিমাইয়ের
কথায় ঘৃতাহুতি পড়ল। ইতিমধ্যে মাধব বাউলে বারান্দা ধোওয়া শেষ করে বালতি কয়েক জল
মাথায় ঢেলে স্নান সেরে ফেলেছে। তারপর ভেজানো দরজা ঠেলে ঢুকে পড়েছে ভিতর। পরান
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঢং–ঢং শব্দে একটানা ঘণ্টা বাজিয়ে চলেছে। ভিতরে সম্ভবত পুজোয়
বসেছে বাউলে। দেরি না করে সাবধানে পা ফেলে নেমে পড়লাম মন্দিরের বারান্দায়। পায়ে
পায়ে এগিয়ে গেলাম দরজার দিকে।
আধ-ভেজানো দরজা দিয়ে ভিতরে মুখ
বাড়িয়ে গোড়ায় ঘন অন্ধকার ছাড়া নজরে পড়েনি কিছুই। তারপর চোখ সয়ে আসতে বেদির উপর
কোরা শাড়ি পরানো মা বিশালাক্ষী দেবীর মূর্তি নজরে পড়ল। মা দুর্গাই যেন। ততক্ষণে
বাউলে গামছার পুঁটলি খুলে ছোট এক মোমবাতি জ্বেলে দিয়েছে প্রতিমার সামনে। তাতে
অন্ধকার সাফ হল সামান্যই। তবে মেঝের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম বারান্দার মতো মন্দিরের
ভিতরের মেঝে একেবারেই পরিষ্কার নয়। অসংখ্য কাদা পায়ের দাগ। কতক শুকিয়ে গেলেও অনেক
দাগই কাঁচা। সন্দেহ নেই, মাধব বাউলের অল্প আগে কাদা পায়ে ঢুকেছিল কেউ।
সেকথা বাউলেকে জিজ্ঞাসা করা গেল
না অবশ্য। মানুষটি তখন পুজোয় ব্যস্ত। পুঁটলি থেকে দুটো সিঁদুরের পাতা মায়ের কপালে
ছুঁইয়ে একটা পায়ের কাছে রাখলেও অন্যটা ফের পুঁটলিতে রেখে বের করেছে সঙ্গে আনা
ছাড়ানো এক জোড়া নারকেল। একটা একটা করে দুটো নারকেলই মায়ের ঘটের সামনে মেঝেতে ঠুকে
ফাটিয়ে জলটা ঘটের উপর ঢেলে দিয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণামে বসল তারপর।
বাউলে স্নান সেরে মন্দিরে ঢুকেছে।
পরান স্নান করেনি, ঢোকেনি ভিতরেও। তাই ইচ্ছে থাকলেও বাউলেকে জিজ্ঞাসা না করে
ভিতরে ঢুকতে ভরসা হল না। তবু মেঝের পায়ের ছাপগুলো কিসের ভাল করে দেখার জন্য মুখ
অনেকটাই গলিয়ে দিয়েছিলাম ভিতরে। হঠাৎই অন্ধকারে দুই জোড়া জ্বলজ্বলে চোখের দিকে নজর
পড়তে চমকে উঠলাম। ভিতরে শুধু বাউলে নয়, আরো দু’জন রয়েছে!
বেজায় ঘাবড়ে মাথা টেনে নিলেও চোখ
সরাইনি অবশ্য। তাই অল্প পরেই বুঝতে বাকি থাকেনি, অন্ধকারে চোখগুলো আসলে বাদুড়ের।
মন্দিরের অন্ধকারে সিলিং থেকে দুটো বাদুড় ঝুলছে। আকারে যথেষ্টই বড়। অত বড় বাদুড়
আগে দেখিনি। হয়তো সুন্দরবনের বাদুড় এমন বড়ই হয়। কৌতূহলে ভাল করে দেখার জন্য ফের
দরজা দিয়ে মুখ বাড়িয়েছি, মনে হল, চোখ দুটো ক্রমেই যেন বড় হচ্ছে। দেখতে দেখতে
জ্বলজ্বলে ভাঁটার মতো। হিংস্র সেই চোখ দিয়ে আগুন ঠিকরে বেরচ্ছে! সেই ভয়ানক চোখের
দিকে তাকিয়ে মুহূর্তে মাথা কেমন দুলে উঠল। তারপর আর মনে নেই কিছু।
জ্ঞান যখন ফিরল, দেখি ধরাধরি করে আমাকে নৌকোয়
নিয়ে আসা হয়েছে। ঝুঁকে পড়ে বাতাস করছে বাউলে নিজেই। আমাকে চোখ মেলতে দেখে বলল, ‘দাদাবাবু, আপনার নৌকো থেকে নামা একেবারেই
ঠিক হয়নি। তেমন হলে আমিই তো নিয়ে যেতাম। পিছনে আপনিও যে চলে এসেছেন পুজোয় ব্যস্ত
থাকায় ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। হতচ্ছাড়া পরান আর নিমাইও সাবধান করেনি! যাই হোক, মা বিশালাক্ষীই রক্ষা করেছেন।’
ততক্ষণে উঠে বসেছি। তাড়াতাড়ি
বললাম, ‘ক–কেন বাউলেদা?’
‘বিশালাক্ষী মন্দিরের দুই চৌকিদার
আজ হাজির ছিলেন যে। দেখেননি?’
‘ও তো দুটো বাদুড়! অন্ধকারে সিলিং
থেকে ঝুলছিল। তবে বাদুড়ের অত বড় আর হিংস্র চোখ ভাবা যায় না! দেখে মুহূর্তে কেমন
ঘুরে উঠেছিল মাথা।’
‘শুধু বাদুড়? মেঝেতে আর কিছু
দেখেননি?’
‘দেখেছিলাম তো।’ ঢোঁক গিয়ে বললাম, ‘মেঝে ভরতি কাদা পায়ের দাগ শুধু।
কিসের পায়ের দাগ, অন্ধকারে বুঝিনি অবশ্য।’
‘ওরা,’ সামান্য ইতস্তত করে দুই হাত
কপালে ছুঁইয়ে বাউলে বলল, ‘ওরা বিশালাক্ষী মন্দিরের দুই চৌকিদার।’
‘বিশালাক্ষী মন্দিরের চৌকিদার!’
‘হ্যাঁ দাদাবাবু, বিশালাক্ষী মন্দিরের দুই
চৌকিদার। দুইজনই মন্দিরে ছিলেন আজ। ওরাই সব দেখেশুনে রাখে যে। মায়ের কাছে
প্রার্থনা জানায়, জোড়া তালগাছকে যেন অভিশাপ থেকে মুক্তি দেন।’
এর বেশি মাধব বাউলে আর ভাঙেনি
সেদিন। শুধু পুজোর সেই নারকেল থেকে কয়েক টুকরো প্রসাদ হাতে দিয়ে বলেছিল, ‘আজ মায়ের প্রসাদ আপনিই আগে নিন
দাদাবাবু।’
সেই সঙ্গে মায়ের কপালে ছোঁয়ানো
সেই সিঁদুরের পাতা থেকে ফোঁটাও দিয়েছিল।
বাউলের কথার মাথামুণ্ডু সেই
মুহূর্তে বুঝতে না পারলেও তখন আর ঘাঁটাইনি তাকে। বাউলের ধমক খেয়ে পরান আর নিমাইয়ের
মুখেও কুলুপ। অগত্যা আর জানা হয়নি কিছু।
মাধব বাউলের সঙ্গে তারপরে বাদাজঙ্গলে
যাওয়া না হলেও দেখা হয়েছিল একবার। তবে
সেদিনের প্রসঙ্গ বাউলে যেমন তোলেনি, জিজ্ঞাসা করতে পারিনি আমিও। মা
বিশালাক্ষী মন্দিরেও যাওয়া হয়নি আর। কৌতূহল মেটাতে তাই কথা বলেছিলাম বাদার অন্য
কয়েকজনের সঙ্গে। তাতেই জেনেছি, টুরিস্ট তো নয়ই, ইলিশের মরশুম ছাড়া ওদিকে মাছ
ধরার নৌকোও তেমন যায় না। একে অনেক দূর। তারপর পারমিটও দেওয়া হয় না। অথচ মন্দিরে
নিত্য পুজোর জন্য সেবাইতের ব্যবস্থা আছে নাকি। বাউলেও বলেছিল সেই কথা। একজন তো
জানিয়েছিল, সেবার তারা পারমিট ছাড়াই ওদিকে গিয়েছিল মাছ ধরতে। সন্ধেয়
কাছেই এক খালে নৌকো ভিড়িয়েছে, কানে এসেছিল ঘণ্টার ঢং–ঢং শব্দ। মা বিশালাক্ষীর
মন্দিরে সন্ধের পুজো শুরু হয়েছে।
তবু সব বিচার করে মনে হয়েছে, সেবাইতের ব্যাপারটা ঠিক নয় বোধ
হয়। মাছ ধরা নৌকো পর্যন্ত যেখানে যায় কালেভদ্রে, সেখানে নিত্য পুজোর সেবাইত আসে
কোথা থেকে! অথচ অমন ঝকঝক তকতকে মন্দির! বিশালাক্ষী মন্দিরের চৌকিদার তাই আমার কাছে
রহস্যই রয়ে গেছে।
আপলোড: ২০/৭/২০২১
খুব ভালো লাগল শিশিরদা
ReplyDeleteখুব সুন্দর গল্প, মন ভরে গেলো
ReplyDeleteএকটু অন্যরকম। নতুনত্ব রয়েছে। আমার দারুণ লেগেছে
ReplyDeleteখুব সুন্দর!
ReplyDeleteখুব ভালো লেগেছে
ReplyDeleteKhub sundar golpo...
ReplyDelete