Monday, 16 December 2024

হরর গল্প : দুঃস্বপ্ন (শিশির বিশ্বাস)

 


দুঃস্বপ্ন
শিশির বিশ্বাস

[লর্ড হ্যালিফ্যাক্স লিখিত The corpse that rose গল্প অবলম্বনে]

অবাস্তব, অলৌকিক ব্যাপারে কোনোদিনই আস্থা নেই তেমন কিছু চোখের সামনে দেখলেও বরাবর কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দিয়েছি কিন্তু আজই হোঁচট খেলাম প্রথম গোড়া থেকেই বলি তাহলে

ছুটিতে দিন কয়েকের জন্য বেড়াতে এসেছিলাম দাদুর কাছে বৃদ্ধ মানুষটি গ্রামের বাড়িতে একাই থাকেন দেখাশুনোর জন্য সর্বক্ষণের পরিচারক একজন আছে অবশ্য তবু বৃদ্ধ মানুষটি আমাকে পেলে খুশি হন আমিও সুযোগ পেলেই চলে আসি প্রতিদিন দাদু তাঁর পুরনো মডেলের গাড়িতে আমাকে নিয়ে বের হয়ে পড়েন ঘণ্টা কয়েক গ্রামের খামার, সবজির খেত, পুরনো জলা, বাগানের পথে ঘুরে দিব্যি কেটে যায় হরেক জাতের পাখি আর বুনো ফুলের মেলা এক অন্য জগৎ ফেরার পথে সারা হয় দিনের হাটবাজার গতকাল আসতে রাত হয়ে গেছে দাদু তাই আর আমাকে নিয়ে বের হতে পারেননি ঠিক হয়ে আছে সকালে প্রাতরাশ সেরেই বেরিয়ে পড়া হবে

ভোর সকালে তাই যখন পাশের ঘর থেকে দাদুর চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল, গোড়ায় ভেবেছিলাম, দাদু সেই জন্যই বুঝি ডাকছেন ধড়মড়িয়ে উঠে বসতেই অবশ্য বুঝলাম ভাবনাটা ভুল বাইরে ভাল করে আলো ফোটেনি তখনো বের হবার সময়ও হয়নি অথচ দাদু তখনো পাশে তাঁর শোবার ঘর থেকে আর্ত স্বরে ডেকে চলেছেন, ‘আর্থার, আর্থার

বৃদ্ধ মানুষটির সেই ভয়ার্ত ডাকে বেশ ঘাবড়েই গেলাম এরপর অসুস্থ হয়ে পড়লেন নাকি?  

ছুটে পাশের ঘরে গিয়ে দেখি তিনি বিছানায় বসে আছেন মানুষটির মুখ ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে মৃদু কাঁপছেন তখনো 

কী ব্যাপার দাদু? কী হয়েছে?’

আমাকে দেখে কিছুটা যেন ধাতস্থ হলেন তিনি খানিক থম হয়ে থেকে বললেন, ‘ঘুমের ভিতর শেষ রাতে ভয়ানক এক দুঃস্বপ্ন দেখলাম দাদুভাই ভয়ানক দুঃস্বপ্নবলতে বলতে দাদুর গলার স্বর ফের কেঁপে উঠল

যথেষ্ট বয়স হলেও দাদুকে এমন কখনো দেখিনি যথেষ্টই সাহসী মানুষ আর্মিতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ছিলেন গ্রামের খামার বাড়িতে একাই থাকেন অনেক অনুরোধেও নড়ানো যায়নি বিচলিত হয়ে বললাম, ‘কী স্বপ্ন দাদু?’

আমার প্রশ্নে কেমন থমকে গেলেন মানুষটি সামান্য ঢোঁক গিলে বললেন, ‘থাক দাদুভাই থাক সে কথা

আমি অবশ্য ছাড়লাম না ঘাড় ঝাঁকিয়ে ফের জিজ্ঞাস করতে উনি শুরু করলেন অল্প আগে দেখা তাঁর স্বপ্নের কথা

সে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দাদুভাই জানো তো স্ট্যাফোর্ডশায়ার আমাদের এখান থেকে খুব দূরে নয় আমার এক বাল্যবন্ধু মিঃ মঙ্কটন থাকেন ওখানে আর্মিতেও একসঙ্গে ঢুকেছিলাম তখন অবশ্য তেমন যোগাযোগ রাখত না কিছুটা এড়িয়েই চলত একসঙ্গে ঢুকেও আমি লেফটেন্যান্ট কর্নেল হয়েছিলাম মেজরের বেশি এগোতে পারেনি, হয়তো সেই কারণে তবে রিটায়ার করার পর সে সব আর মনে রাখিনি কেউ সম্পর্কটা আগের থেকেও বেশি এখন মঙ্কটন প্রায়ই আসে আমার এখানে আমিও মাঝেমধ্যে যাই পুরনো দিনের গল্পে বুঁদ হয়ে থাকি বেশিটাই সেই ছেলেবেলার এছাড়া স্ট্যাফোর্ডশায়ারে পুরনো এক চার্চ রয়েছে চার্চের নিরিবিলিতে বসে থাকতেও বেশ লাগে সেখানেও যাই মাঝেমধ্যে স্বপ্নে দেখলাম আমি যেন সেই চার্চে গেছি ইচ্ছে খানিক চার্চে বেড়িয়ে মঙ্কটনের ওখানে যাব

অনেক পুরনো দিনের চার্চ লাগোয়া বিশাল বাগান সারি সারি সমাধি ফলক বিকেলের চমৎকার আলোয় খানিক ঘুরে চার্চে ঢুকতে যাচ্ছি, গির্জার ঘণ্টা বেজে উঠল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শুরু হবার ঘণ্টা কোনো শবযাত্রীদল এসেছে প্রার্থনা শুরু হবে গির্জার ভিতরে না ঢুকে আমি আবার পথে নেমে এলাম ভাবলাম যতক্ষণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া চলে ততক্ষণ সমাধিফলক, সমাধিস্তম্ভগুলো ঘুরে দেখা যাক বরং বহু পুরোনো দিনের মানুষ এখানে সমাহিত হয়ে আছেন সমাধিফলকে ধরা সেই ইতিহাস

বেরিয়ে আসছি, নিছক কৌতূহলবশেই কাছে শববাহীদলের একজনকে পেয়ে বললাম, কে মারা গেছেন সার?

আজ্ঞে মি. মঙ্কটন

প্রায় চমকে উঠলাম শুনে তবু ফের প্রশ্ন করলাম কোথায় থাকতেন উনি?

সামারফোর্ড হাউসে সার এক্স আর্মি অফিসার

হায় কপাল! মনটা বেজায় খারাপ হয়ে গেল এত পরিচিত মানুষ, অথচ খবরটাও দেওয়া হয়নি আমাকে! ঠিক করলাম, খবর না দিক, এসে যখন পড়েছি, বাল্যবন্ধুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রার্থনায় যোগ দেব

ফের গির্জার ভিতর ঢুকে দেখি সামনের আসন সবই ভরতি হয়ে গেছে অগত্যা পিছন দিকের একটা আসনে বসেছি, প্রার্থনা শুরু হবার প্রাথমিক কাজ চলছে, ওই সময় গির্জার এক কর্মচারী এগিয়ে এল আমার দিকে, লোকটাকে আগে দেখিনি কখনো বেঁটে শীর্ণ চেহারা বয়সের ভারে সামান্য নুয়ে পড়েছে শরীর কোঁচকানো মুখের দিকে তাকালে কেমন যেন অস্বস্তি জাগে ভিতরে এক পলক তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম লোকটা কিন্তু আমার কাছে এসেই থামল সামান্য উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, সার, আপনি এখানে! সেই থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি আমি

কেন?

সার, সম্ভবত আপনি প্রয়াত মিঃ মঙ্কটনের সবচেয়ে পুরনো বন্ধু জীবিত একমাত্র বাল্যবন্ধুও

তা ঠিক নিতান্ত অপরিচিত লোকটা কীভাবে জানতে পারল জানা নেই কিন্তু ওই অবস্থায় অস্বীকার করার উপায় ছিল না

তাহলে সার, চার্চের তরফ থেকে শবযাত্রীদের পুরোভাগে আপনাকেই থাকতে অনুরোধ করব মি. মঙ্কটনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর মৃতদেহ সাধারণ সমাধি নয়, চার্চের ভূগর্ভস্থ সমাধিকক্ষে রাখা হবে প্রার্থনা শেষে শবদেহ সেখানেই যাবে আপনি হবেন মিছিলের প্রধান

মঙ্কটনেরা বনেদি পরিবার জানতাম, পুরনো এই চার্চের ভূগর্ভস্থ কক্ষে ওদের পরিবারের মৃতদেহ রাখার ব্যবস্থা রয়েছে পরিবারের কেউ মারা গেলে মৃতদেহ সেখানেই রাখা হয় মড়া রাখার এসব ভূগর্ভস্থ কুঠুরির ভিতর আগে কখনো যাইনি আমি, যেটুকু শুনেছি, তা খুব সুখপ্রদ নয় নীচু অন্ধকার ঘরের ভিতর সারি দিয়ে শুধু মৃতদেহের কফিন আর কফিন তার কতক পুরোনো হয়ে খসে পড়েছে বেরিয়ে এসেছে দেহাবশেষ বাতাসে ভ্যাপসা গন্ধ বেশিক্ষণ থাকলে ভিতরে অস্বস্তি শুরু হয় তবু প্রস্তাবটা অস্বীকার করতে পারলাম না

এরপর যথাসময়ে মৃতের আত্মার মুক্তির জন্য প্রার্থনা শুরু হল তারপর ফাদার একে একে নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার পর শুরু হল অন্তিম যাত্রা চারজন বাহক কফিনটাকে কাঁধের উপর তুলল কফিনটাকে তারাই সমাধিকক্ষে বয়ে নিয়ে যাবে গির্জার সেই বুড়ো কর্মচারীটি ফের আমার কাছে এগিয়ে এল চোখের ইঙ্গিতে দেখিয়ে দিল পথটা

সিঁড়ি দিয়ে কয়েক ধাপ নামবার পর মাথা অনেকটাই নিচু করতে হল সঙ্কীর্ণ চিলতে সুড়ঙ্গপথের সিলিং এত নিচু যে, শুধু মাথা নামিয়ে হল না, কোমর থেকে বাঁকিয়ে কিছু কুঁজোও হতে হল এরপর সমাধি ঘরের পুরনো ভারি দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকবার সময় শরীরটাকে বাঁকাতে হল আরো প্রায় হামাগুড়ি দেবার অবস্থা

ভূগর্ভের সমাধি ঘরের মধ্যে সামান্য উঁচু এক প্ল্যাটফর্ম তার উপর কফিন রাখা হয় মঙ্কটন পরিবারের তিরিশ চল্লিশজন প্রয়াত মানুষের কফিন রয়েছে সেই প্ল্যাটফর্মের উপর কতক পুরনো কফিন ভেঙেও গিয়েছে ফোকর দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে দেহাবশেষ কঙ্কালের অংশ মঞ্চের উপর নতুন কফিনটা রাখার পর শবযাত্রীরা সার বেঁধে সমাধি ঘর থেকে বের হতে শুরু করল ঢুকবার সময় আমি ছিলাম সবার আগে, এবার আমি সবার পিছনে পড়ে গেলাম দরজার দিকে এগোচ্ছি এমনি সময়ে গির্জার সেই বেঁটে বুড়োটা গুঁড়ি মেরে এগিয়ে এল আমার পাশে হঠাৎই কনুই দিয়ে জোরাল এক ধাক্কা মারল আমাকে চার্চ থেকে যে টর্চটা দেওয়া হয়েছিল আচমকা ধাক্কায় সেটা ছিটকে পড়ল হাত থেকে ধুলোকাদায় ভরা মেঝেতে পড়ে নিভে গেল আচমকাই অন্ধকারে হাতড়াচ্ছি সেটা, জোরাল শব্দে ভূগর্ভের সমাধি ঘরের দরজা আচমকাই বন্ধ হয়ে গেল তারপরেই বাইরে ক্লিক করে ছোট একটা আওয়াজ

বুঝতে বাকি রইল না, বাইরে থেকে দরজায় তালা পড়ে গেল কী ভয়ানক মনের অবস্থা তখন, বলে বোঝাতে পারব না এই ভয়ঙ্কর সমাধি ঘরে জীবিত মানুষ বলতে আমি একা, একেবারে একা অন্ধকারের মধ্যে অনুমানে দরজার দিকে ছুটে গেলাম বন্ধ দরজায় কপালটা ভয়ানক ঠুকে গেল তবু দরজায় ধাক্কা দিয়ে পাগলের মতো সমানে চিৎকার করতে লাগলাম, দরজা খুলুন দরজা খুলুন আমি ভিতরে রয়ে গিয়েছি প্লিজ

কিন্তু চিৎকার করাই সার হল, বাইরে থেকে কোন সাড়াই পাওয়া গেল না

ভয়ানক অন্ধকারের মধ্যে সেই মড়ার রাজ্যে তারপর কতক্ষণ কাটিয়েছি কিছুমাত্র হুঁশ নেই মনে হচ্ছিল একটা যুগ যেন ভয়ে চোখও তারপর মেলতে পারিনি হঠাৎই চোখ মেলতে টের পেলাম অন্ধকার অনেকটাই যেন ফিকে হয়ে এসেছে অন্ধকার কিছুটা হলেও সয়ে এসেছে চোখে অদূরে সেই প্ল্যাটফর্মে সার দিয়ে রাখা রয়েছে কফিনগুলো শেষ কফিনটা সদ্য মৃত বাল্যবন্ধু মঙ্কটনের তাকিয়ে আছি, হঠাৎই জোরাল একটা শব্দ কানে এল প্রথমে মনে হয়েছিল, চার্চের মানুষগুলো হয়তো ভুল বুঝতে পেরে আমার খোঁজে ফের সুড়ঙ্গর দরজা খুলছে

কিন্তু ভুল ভাঙতে দেরি হল না শব্দটা দরজা নয়, আসছে অল্প আগে রেখে যাওয়া মঙ্কটনের নতুন কফিন থেকে ঝকঝকে কফিনটার গায়ে হঠাৎই চিড় ধরার চিহ্ন দারুণ আতঙ্কে মাথার প্রতিটি চুল তখন খাড়া হয়ে উঠেছে আমার চোখের সামনেই দামি সেগুন কাঠের কফিনটার গায়ের সেই ফাটল ক্রমেই বড় হতে লাগল আরো বড় দেখতে দেখতে কফিনের গায়ে বড় এক ফাটল পরিষ্কার দেখতে পেলাম সেই ফাটলের ভিতর থেকে হিঁচড়ে বের হয়ে আসছে বুড়ো মঙ্কটনের মৃতদেহটা দেখতে দেখতে পুরো দেহটাই বের হয়ে এল বাইরে দুই পায়ে উঠে দাঁড়াল কফিনের পাশে কী ভয়ানক, এই সামান্য সময়ের মধ্যে পচন ধরেছে দেহটায় গলিত মুখের অনেকটা খসে গিয়ে বীভৎস একরাশ দাঁত বের হয়ে পড়েছে পৈশাচিক উল্লাসে সেই দেহটা টালমাটাল পায়ে দুই হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে লাগল আমার দিকে কর্মক্ষেত্রের পদোন্নতিতে টপকাতে পারেনি আমাকে ভিতরে সেসময় ক্ষোভ একটা ছিলই জানতাম সেই ক্ষোভ মেটাতে চায় এবার!

প্রাণ বাঁচাতে অতঃপর ছুটতে শুরু করলাম কিন্তু কফিন ভরতি ওই সমাধিকক্ষে এভাবে কী পরিত্রাণ পাওয়া যায় হোঁচট খেতে খেতে এদিক থেকে ওদিকে ছুটে বেড়ানোই সার হল যেখানেই যাই তাকিয়ে দেখি বুড়ো মঙ্কটনের মৃতদেহটা ধাওয়া করে আসছে পিছনে তারপর কতক্ষণ যে ওই মৃত্যুপুরীর ভিতর ছুটে বেড়িয়েছি, হুঁশ নেই

তারপর দারুণ আতঙ্ক আর ক্লান্তিতে একসময় লুটিয়ে পড়েছি মেঝের উপর ফের উঠে দাঁড়াব, পচাগলা মৃতদেহটা মুহূর্তে এসে পড়ল আমার উপর ঘাড়ের উপর বসিয়ে দিল দুই হাতের তীক্ষ্ণ নখ দারুণ যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠতে গেলাম, কিন্তু গলা দিয়ে কোন স্বর বেরোল না বীভৎস মৃতদেহটার মরণ আলিঙ্গন থেকে ছাড়া পাবার জন্য বৃথাই চেষ্টা করতে লাগলাম হায় ভগবান! শেষ পর্যন্ত এভাবে এক প্রেতের হাতে মৃত্যু! ভাবতে গিয়ে হঠাৎ যেন কিছু শক্তি পেলাম ভিতরে ভিতরের সব শক্তি এক করে প্রাণপণ চেষ্টায় শেষ চিৎকার করে উঠলাম যেন আর তারপরেই ভেঙে গেল ঘুমটা তাকিয়ে দেখি চার্চের সমাধিঘরে নয়, শুয়ে আছি নিজের বিছানায় সমস্ত শরীর ঘামে ভিজে গিয়েছে ভিতরের আতঙ্ক তখনো কাটেনি মনে পড়ল তোর কথা তাই ডাকলাম তোকে ভাগ্যিস গতকাল বুড়োকে দেখতে এসেছিলি!’

একটানা কথা বলে দাদু থামলেন ইতিমধ্যে বাইরে আলো ফুটে ভোরের রোদ উঠেছে উঠে গিয়ে জানলাদরজা খুলে দিয়ে হেসে বললাম, ‘স্বপ্নে মাথামুণ্ডু আছে নাকি দাদু! বাইরে রোদ উঠেছে, চল একটু বেড়িয়ে আসি বরং সব ঠিক হয়ে যাবে

দাদু অবশ্য রাজি হচ্ছিল না মানুষটা তখনও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি ওই সময় পরিচারক প্রাতরাশের সরঞ্জাম সামনে এনে রাখল সেগুলোর সদগতি করে দাদু কিছুটা স্বাভাবিক হলেন যেন নিজেই বললেন, ‘চল তাহলে একটু ঘুরেই আসি দুজন গাড়ি নিয়েই বের হওয়া যাক একবারে বাজারটাও করে আসা যাবে

ফিরতে কিছু দেরিই হল তাই কাছেই এক পার্কে অনেকটা সময় কাটিয়ে যাওয়া হল বাজারের দিকে কেনাকাটা করে যখন ঘরে ফেরা হল বেলা অনেকটাই দাদু বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতে আমি মালপত্র নিয়ে নেমে পড়েছিলাম আগেই গাড়ি গ্যারেজে ঢুকিয়ে দাদুর আসতে কিছু দেরি হবে

অনেক কিসিমের মালপত্র ঘরে ঢুকে টেবিলে সাজিয়ে রাখছি, নজরে পড়ল টেবিলের উপর একটা ভাঁজ করা চিঠি পড়ে আছে উপরে দাদুর নাম তাকিয়ে আছি, বাটলার জানাল, খানিক আগে স্ট্যাফোর্ডশায়ারে মি. মঙ্কটনের বাড়ি থেকে একজন এসেছিলেন খানিক অপেক্ষাও করেছিলেন দাদুর জন্য দেরি হবার কারণে চিঠিটা লিখে রেখে গেছেন

দাদুকে লেখা চিঠি আমার পড়ার কথা নয় কিন্তু ওই স্ট্যাফোর্ডশায়ার আর মি. মঙ্কটনের নাম শোনার পর বুকের ভিতরটা কেমন কেঁপে উঠল হঠাৎ দেরি না করে হাতে নিয়ে খুলে ফেললাম

কী ভয়ানক! চিঠিটার উপর সামান্য চোখ বোলাতেই প্রায় কেঁপে গেলাম! বুকের ভিতর কেউ যেন হাতুড়ি পেটাল স্ট্যাফোর্ডশায়ারের মি. মঙ্কটন আজই মারা গেছেন শেষরাতে দাদু যখন ভয়ানক স্বপ্নটা দেখে জেগে ওঠে তার অল্প আগে সজ্ঞানে মারা যাবার আগে তিনি বলে গেছেন, তাঁর শেষ যাত্রার পুরোভাগে বাল্যবন্ধু আমার দাদু অবশ্যই যেন থাকেন আজ বিকেলেই তাঁর অন্তিম কাজ

আগেই বলেছি, অন্য সময় হলে স্রেফ কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দিতাম কিন্তু আজ আর পারলাম না চিঠিটা হাতে নিয়ে কয়েক মুহূর্ত থম হয়ে থেকে শেষে দলা পাকিয়ে বাজে কাগজের ঝুড়িতে ফেলে দিলাম কিছুতেই ওটা দাদুর হাতে দেওয়া চলবে না

আপলোড: ১৬/১২/২৪